Breaking

Monday, 18 July 2022

ভারতীয় মুসলমানদের নবজাগরণে এবং আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে সৈয়দ আমীর আলীর অবদান

        সৈয়দ আমীর আলী 

     (১৮৪৯- ১৯২৮)

                                            

সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন একজন ভারতীয় মুসলিম আইনজ্ঞ , যিনি কলকাতা হাইকোটের প্রথম মুসলিম বিচারপতি ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একাধারে একজন আইনজ্ঞ, সমাজ সংস্কারক এবং লেখক। তিনি ইসলামের ইতিহাস নিয়ে কয়েকটি বিখ্যাত বই লিখেছিলেন। ভারতীয় মুসলমানদের নবজাগরণে এবং আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে সৈয়দ আমীর আলীর অবদান অবিস্মরনীয় । সৈয়দ আমীর আলী অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। বাংলার মুসলমানদের পুনর্জাগরণে এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে  যে কয়জন অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে সৈয়দ আমীর আলী অন্যতম ।






জন্ম ও বংশ পরিচয়:

সৈয়দ আমীর আলী ১৮৪৯ সালের ৬ই এপ্রিল উড়িষ্যার কটকে জন্ম গ্রহণ করেন। ইরানের মেশেদ থেকে আগত এক শিয়া পরিবারের বংশধর সৈয়দ সা’দাত আলীর পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। আমীর আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের সৈন্যদলের সাথে ইরান পরিত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন অতঃপর মুগল ও অযোধ্যার দরবারে চাকরি করেন। সৈয়দ আমির আলীর জম্মের পর তার পিতা সপরিবারে কলকাতা আসেন। সেই থেকে তিনি কলকাতায় থাকেন। পরবর্তীতে তারা চুচুড়ায় আবাস গড়ে তোলেন।


শিক্ষা জীবন:

সৈয়দ আমীর আলী হুগলী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে হুগলী মাদ্রাসার ব্রিটিশ শিক্ষকদের সংস্পর্শে আসেন এবং পরীক্ষায় কৃতিত্ত্বের সাথে পাশ করেন । তার পরিবার একজন মৌলভিকে গৃহশিক্ষক নিয়োজিত করে, যিনি তাকে কুরআন, আরবি ও ফারসি শিক্ষা দিতেন। পরবর্তী সময়ে গৃহের বাইরে তিনি অধিকতর উচ্চ পর্যায়ে আরবি ভাষা শেখেন। তিনি বেশ কিছু প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসামান্য কৃতিত্ব সহকারে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৮ সালে ইতিহাসে এম.এ পাস করেন। ১৮৬৯ সালে এল এল বি শেষ করার পর তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে লন্ডন যান। ১৯৭৩ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পাস করেন।


কর্ম জীবন:

সৈয়দ আমীর আলী ব্যারিস্টারি পাস করার পর দেশে ফিরে এসে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে আইনের অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট এবং কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে টেগোর অধ্যাপক হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেন। আমির আলী ১৮৯০ সালে প্রথম মুসলিম হিসেবে কলকাতা হাইকোটের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করে বিলাত চলে যান এবং সেখানে আজীবন স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। ১৯২৮ সালে তিনি লন্ডনে ইনতিকাল করেন।


পদবী ও সম্মাননা: 

সৈয়দ আমীর আলী ১৮৭৮ সালে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৮৮৩ সালে কেন্দ্রীয় আইন সভার সদস্য মনোনীত হন। ১৯০৯ সালে তিনি প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৮৮৭ সালে তিনি সি,আই,ই উপাধিতে ভূষিত হন। আইনশাস্ত্রে অগাধ পান্ডিত্যের জন্য ক্যামব্রিজ,কলকাতা ও আলীগড় বিশ^বিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে।



মুসলিম সমাজের উন্নতিতে সৈয়দ আমীর আলীর অবদান:


ক. মুসলিম জাতীয়তাবাদের ধারনা:

বৃটিশদের সহযোগী হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায় তাদের নিজেদের অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি ধর্ম ভিত্তিক হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটায়। বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা সাহিত্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রচলন করেন। সুরেন্দ্রনাথ বানার্জি সহ হিন্দু নেতারা এবং হিন্দু ভবধারাপুষ্ট সংবাদ পত্রগুলো হিন্দু জাতীয়তাবাদের বাণী প্রচার করে। সে জাতীয়তাবাদী উচ্চ শিক্ষিতরাও মুসলিম বিদ্বেষ পোষন করত। আমির আলী বুঝতে পেরেছিলেন যে হিন্দু নেতাদের অনুসৃত জাতীয়তাবাদ মুসলমানদের স্বার্থের পরিপন্থি হবে। আমীর আলী ই প্রথম ব্যাক্তি যিনি ভারতীয় মুসলিমদের কে একটি জাতি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি তার প্রবন্ধ ও বক্তৃতায় প্রকাশ করেন যে, গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী ভারতের সাড়ে পাঁচ কোটি মুসলমান অধিবাসীগন একটি জাতি এবং ভারতে তারাই একমাত্র জাতি যাদের মধ্যে সমতা আছে। এর মাধ্যমে তিনি মূলত মুসলিমদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বীজ বপন করেছেন।


খ. মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি:

 মুসলিমদের মধ্যে রাজভক্তি ও ইংরেজি শিক্ষার কর্মসূচী গ্রহণ করে নবাব আব্দুল লতিফ ও স্যার সৈয়দ আহমদ খান ব্যাপক কৃতিত্ব অর্জণ করেন। কিন্তু মুসলমানদের রাজনীতি ও পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে আমীর আলীর অবদান সমসাময়িক এই দুই নেতার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমীর আলীও মুসলিমদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতেন কিন্তু তিনি বিশ^াস করতেন যে শুধু ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে মুসলমানদের মুক্তি আসবেন যতক্ষণ না শিক্ষার পাশাপাশি মুসর্লিমরা রাজনৈতিক অধিকার সর্ম্পকে সচেতন হয়। তিনি মনে করতেন যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় শিক্ষার বিস্তার এবং রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে।


গ. রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা:

হিন্দু জাতীয়তাবাদের উন্থান এবং বিভিন্ন ছোট ছোট রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকলে আমীর আলী মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়েজনীয়তা তীব্র ভাবে অনুভব করেন। তিনি সৈয়দ আহমদ খানকে বুঝাতে চেষ্টা করেন যে ,হিন্দুদের মধ্যে যেরূপ রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যবস্থা হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে সেরূপ না হলে তরা হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবল ¯্রােতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। নবাব আব্দুল লতিফ এবং স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার সাথে একমত না হলেও সৈয়দ আমীর আলী ১৮৭৭ সালে “সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান এসোসিয়েশন” প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই সংগঠনের ব্যানারেই তিনি তার যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনা করেন। এ ক্ষেত্রে স্মারকলিপি প্রদান, প্রতিনিধি দল প্রেরণ,বড় লাট ও ছোট লাটদের অভ্যর্থনা প্রভৃতি উপায় তিনি অবলম্বন করেন। দেশে বিদেশে এর ৫৩টি শাখা স্থাপিত হয়। 


        

ঘ. শিক্ষা বিষয়ক কার্যকলাপ:

আমীর আলীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধ্যমে সম্ভাব্য সকল উপায়ে মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি মুসলমানদের শিক্ষা ও রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যেমন; 


      [১] ১৮৮১ সালের স্মারকলিপি: 

 সৈয়দ আমীর আলী প্রগতিশীল সংস্কারক ছিলেন। তখন ঢাকা,চট্টগ্রাম,রাজশাহী ও হুগলির মাদ্রাসাগুলিতে ছাত্র সংখ্যা খুব কম ছিল। এজন্য তিনি মনে করেন যে,এগুলোর জন্য মহসিন ফান্ডের টাকা অনর্থক খরচ হচ্ছে। ১৮৮১ সালে সরকারের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে কলকাতায় ছাত্রাবাস সম্বলিত কলেজ স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করেন। যদিও নবাব আব্দুল লতিফ আরেকটি স্মারকলিপিতে তাঁর এই প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করেন।


      [২] হান্টার কমিশনে সুপারিশ:

১৮৮২ সালে হান্টার কমিশনের নিকট আমীর আলী দাবি পেশ করেন যে, ইংরেজি শিক্ষার প্রতি মুসলমানদের পূর্বের বিদ্বেষ নাই। দারিদ্র তাদের শিক্ষার প্রধান অন্তরায়। তারা শিক্ষার খরচ বহনে অক্ষম। শিক্ষা পদ্ধতিও মুসলমানদের উপযোগী হয়নি এবং বিদ্যালয়গুলোতে মুসলিম শিক্ষক নেই। তিনি বেতন হ্রাস,মুসলিম শিক্ষক ও পরিদর্শক নিয়োগ, আরবী ও ফার্সি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিম শিক্ষার কাজে ব্যবহার, মহসিন ফান্ড থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা এবং কলকাতা মাদ্রাসাকে কলেজে উন্নিত করার সুপারিশ করেন। তার কিছু দাবি বাস্তবায়ন করা হয়।  


 [৩] ১৮৮২ সালের স্মারকলিপি:

১৮৮২ সালে আমীর আলী তার সমিতির পক্ষ থেকে লর্ড রিপনের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এতে বলা হয় মুসলমানরা বৃটিশ সরকারের অনুগত কিন্তু তারা দারিদ্রের কারনে অসুখী। সর্বক্ষেত্রে চাকুরি হারিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ মুসলিম জাতি আজ দারিদ্র ও অনুন্নত অবস্থায় পতিত হয়েছে। অন্য সম্প্রদায় মুসলিমদের চাকরির ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে। তিনি চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা দাবি করেন। মুসলিম বিচারক নিয়োগ এবং মহসিন ফান্ডের টাকা শুধু মুসলিমদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করার সুপারিশ করেন। 

      

 [৪] ১৮৮৫ সালের প্রস্তাব: 

আমীর আলীর স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে লর্ড ডাফারিন ১৮৮৫ সালে মুসলমানদের শিক্ষার জন্য এক প্রস্তাব পাশ করে। এতে মুসলিমদের শিক্ষার বিষয়ে আলাদা রিপোর্ট করা ও উচ্চ শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। চাকরির ক্ষেত্রে সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সময় সুযোগ মত মুসলমানদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর বাংলা ও পাঞ্জাব সরকার মুসলিম ছাত্রদের জন্য অনেকগুলো বৃত্তির ব্যবস্থা করে।



ঙ. রাজনৈতিক কর্মসূচী:

      [১] আই সি এস পরীক্ষা:

হিন্দু নেতৃবৃন্দ একযোগে বিলাত ও দিল্লিতে আই সি এস পরীক্ষা গ্রহনের দাবি করলে আমীর আলী এর বিরোধিতা করেন। তিনি মনোনয়ন প্রথা বজায় রাখার দাবি করেন। যেহেতু মুসলিমদের ইংরেজি শিক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি সেহেতু আই সি এস পরীক্ষায় তারা পিছিয়ে পড়বে। সৈয়দ আহমদ ও আমীর আলীর সাথে একমত পাষন করেন।




     [২] সম্বর্ধনার আয়োজন:

১৮৮৮ সালে সমিতির এক প্রতিনিধি দল লর্ড ডাফারিনের সাথে সাক্ষাত করে মুসললিমদের অনুন্নত অবস্থার প্রতি তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। সমিতির পক্ষ থেকে বড় লাটের বিদায়ী সম্বর্ধনা এবং নবাগত বড় লাটের অভ্যথর্না অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে উভয় বড় লাট তাদের ভাষনে মুসলিমদের অসুবিধার কথা স্বীকার করেন এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেন। 

 

[৩] কংগ্রেস পরিত্যাগ:

১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে আমীর আলী ও তাঁর সহকারীগন সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসর কর্মসূচী ও গৃহীত নীতি থেকে তিনি বুঝতে পারেন যে,এটাকে বিনা শর্তে গ্রহণ করলে মুসলিমদের উপর হিন্দুদের স্থায়ী আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। সেজন্য তারা দ্বিতীয় অধিবেশনে যোগদান করেন নি। তিনি মুসলিমদেরকে কংগ্রেসে যোগ দিতে বারণ করেন এবং মুসলিমদের জন্য আলাদা সর্ব ভারতীয় রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

 

[৪] স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্ব দাবি: 

আমীর আলী স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্য দাবি করেন। যাতে মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। ১৮৯২ সালে ভারতীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের বিলে তার এ দাবি গ্রহণ করা হয়।


[৫] লন্ডনে মুসলিম লীগের শাখা গঠন :

১৯০৪ সালে তিনি বিলাতে চলে গেলেও একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য তিনি মুসলমানদের উপদেশ দিয়ে যান। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হলে তিনি এর সদস্য হন এবং ১৯০৮ সালে লন্ডনে এর শাখা চালু করেন। মুসলিমদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি বৃটিশ সরকারের সাথে দেন দরবার করতেন।


[৬] স্বতন্ত্র নির্বাচক মন্ডলী দাবি:

লর্ড মর্লি ভারতীয় শাসন সংস্কার পরিকল্পনায় “মিশ্র নির্বাচক মন্ডলী” প্রথা ঘোষনা করলে মুসলিম লীগ সেটার বিরোধিতা করে। আমীর আলী ১৯০৯ সালে লন্ডন টাইমস পত্রিকায় পাঠানো এক চিঠিতে “মিশ্র নির্বাচক মন্ডলী” প্রথার তীব্র বিরোধিতা করেন এবং মুসলমানদের অস্তিত্বের প্রশ্নে পৃথক নির্বাচন প্রথা দাবি করেন। বৃটিশ সরকার তাকে আমন্ত্রন জানালে তিনি দৃঢ়তার সাথে পৃথক নির্বাচনের ব্যাপারে তার মত ব্যক্ত করেন। তিনি ভারত সচিবের সাথে সাক্ষাত করে স্মারকলিপি পেশ করেন। ১৯০৯ সালে মর্লি-মিন্টু সংস্কারে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হয়। ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে মুসলমানদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।



চ. গ্রন্থ রচনা:

ভারতীয় মুসলিমদের উন্নতি বিধানের জন্য এবং ইসলামকে ইউরোপিয়ানদের কাছে তুলে ধরার জন্য আমীর আলী বেশ কিছু গ্রন্থ ও রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো-

  1. লাইফ এন্ড টিচিং অব দি প্রোফেট

  2. দি স্পিরিট অব ইসলাম

  3. এ সর্ট হিস্ট্রি অব দ্যা সারাসিনস

  4. খ্রিশ্চিয়ানিটি ফ্রম দি ইসলামিক স্ট্যান্ডপয়েন্ট।

  5. ইসলাম

  6. লিগ্যাল স্টেটাস অব ওইমেন ইন ইসলাম 

  7. মোহামেডান ল ।

  8. পারসোনাল ল অব দি মোহামেডানস

  9. আইন উল হিদায়া

  10. জিহাদ


                 



ছ. খিলাফতের প্রতি অনুরক্ত: 

আমীর আলী শিয়া পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলেও তিনি শিয়া -সুন্নি বিভক্তির উর্ধ্বে ছিলেন। তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মার জন্য কাজ করেছেন। খিলাফতের প্রতি তারঁ দুর্বলতা ছিলো। কামাল পাশা তুরস্কে খিলাফতের বিলুপ্তি করতে চাইলে তিনি চিঠির মাধ্যমে তাকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে মুসলমানদের ঐক্যের প্রতিক খিলাফতের অস্তিত্ব বজায় রাখা হয়।


জ. মুসলিম রেনেসাঁর অগ্রদূত: 

ভারতীয় মুসলমানদের রেনেসাঁ বা পুরর্জাগরনের জন্য সৈয়দ আমীর আলী আজীবন সাধনা করেছেন। নবাব আব্দুল লতিফ এবং স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিমদের আধুনিত শিক্ষায় শিক্ষিত করার সংগ্রাম করেছেন । আর আমীর আলী শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক পথ নির্দেশক ছিলেন এবং জাতীয়তাবাদের দীক্ষা দিয়েছেন। ফলে মুসলিম মধ্যবিত্ত শেনীর বিকাশ ঘটে যারা পরবর্তীতে রাজনীতির ক্ষেত্রে হিন্দুদের সাথে সমান তালে অগ্রসর হয় ।  



ভারতীয় মুসলমানগন সৈয়দ আমীর আলীর কাছে চিরঋণী। মুসলমানদের গৌরবময় অতীতের ইতিহাস কৃষ্টি ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করে তাদের পুনর্জাগরনে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা তাকে মুসলিম সমাজে চিরস্মরনীয় করে রাখবে। তিনি যে রাজনৈতিক দীক্ষা দিয়েছিলেন তা পরবর্তীতে মুসলমানদের জন্য খুবই উপকারী হয়েছিলো। তিনি ভারতীয় মুসলমানদেরকে একটি রাজনৈতিক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।







মো: বিল্লাল হোসাইন

(বিসিএস সাধারণ শিক্ষা)

প্রভাষক

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর









No comments:

Post a Comment