মোঙ্গল জাতির পরিচিতি ও উত্থান
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মধ্য এশিয়ায় দুর্ধর্ষ মঙ্গল মঙ্গল জাতির উত্থান ঘটে । চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মোঙ্গলদের এই উত্থান বিশ্ব ইতিহাসে এবং ইসলামের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা । চেঙ্গিস খানের আবির্ভাব মঙ্গল জাতির জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। চেঙ্গিস খান তাঁর অসাধারণ সামরিক প্রতিভা ও সাংগঠনিক শক্তি বলে বহু গোত্রে বিভক্ত এবং সর্বদা আত্মকলহে লিপ্ত এই উচ্ছৃঙ্খল জাতিকে সুসংহত করে এক মহা শক্তিশালী জাতিতে পরিণত করেন এবং এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মঙ্গলরা চীন থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়া, পারস্য ও রাশিয়াতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এবং মিশর, ভারত,জাপান, কোরিয়া, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়াতেও তাদের অভিযানের তরঙ্গ প্রবলভাবে আঘাত হানে। মোঙ্গলদের অভিযানগুলো নিষ্ঠুরতা লুণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ডের কাহিনীতে ভরপুর। কত নগর, জনপদ ও সভ্যতার লীলাভূমি যে তারা ধ্বংস করেছে তার ইয়ত্তা নেই। এ কারণে অনেক ঐতিহাসিক মঙ্গলদিগকে “বিধাতার অভিশাপ” ও “বিশ্বের ত্রাস” বলে অভিহিত করেছেন।
মোঙ্গল কারা ? মোঙ্গলদের উৎপত্তি:
মোঙ্গল বলতে মঙ্গোলিয়ায় চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে যে জাতির উত্থান ঘটেছিল তাদেরকে বোঝানো হয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্ব মোঙ্গলদের উত্থান ঘটে। মোঙ্গলদের আদি বাসস্থান ছিল গোবি মরুভূমি উত্তরে এবং বৈকাল রদের দক্ষিনে। অনেকে মনে করেন মঙ্গোলিয়ায় তাদের আদি বাসস্থান ছিল বলে এদেরকে মঙ্গল বলা হয়। তবে চীনা ঐতিহাসিকদের মতে চৈনিক শব্দ মোঙ্গ থেকে মোঙ্গল শব্দের উৎপত্তি, মোঙ্গ অর্থ সাহসী। মোঙ্গলদেরকে তাতারও বলা হয়ে থাকে।
মোঙ্গলদের শ্রেণীবিভাগ:
মোঙ্গলদের কে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
নাইমান
কেরাইট
মেরকাইট
ঐরাইট
তবে চীনা ঐতিহাসিকরা মোঙ্গলদেরকে আলাদা তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন, সেগুলো হলো-
শ্বেত তাতার
কৃষ্ণ তাতার
বন্য তাতার
মোঙ্গলদের জীবন প্রণালী ও পেশা:
মোঙ্গলদের জীবনপ্রণালী ছিল অত্যন্ত সহজ ও সরল। তারা যাযাবরের মতো তাঁবুতে বসবাস করত এবং পশুর চামড়া পরিধান করতো। পশু শিকার ও লুটতরাজ ছিল তাদের পেশা। দুধ ও মাংস ছিল তাদের প্রধান খাদ্য। অসভ্য যাযাবর জীবনের প্রায় সকল দোষ-গুণই মোঙ্গলদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। সাহসিকতা, কষ্ট সহিংসতা, ও দলনেতার প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য ছিল তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তীরন্দাজ হিসেবেও তাদের বিশেষ খ্যাতি ছিল। বলাবাহুল্য যে ভৌগোলিক পরিবেশ তাদের চরিত্রের এ সকল দোষ গুলোর জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী ছিল।
মোঙ্গলদের ধর্মবিশ্বাস:
মোঙ্গলদের অনেকে খ্রিস্টান ধর্মের সামানীয় শাখা এবং অনেকে নেস্টরীয় শাখার অনুসারী ছিল। ঐতিহাসিক বলেন-
প্রাতঃকালীন উদীয়মান সূর্যের পূজা করা ছিল তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস। এছাড়াও উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করা হয়েছিল তাদের ধর্মীয় একটি রীতি, যেমনটি চেঙ্গিস খানের মধ্যে দেখা যায়। বৈধ-অবৈধের কোন ধার ই তারা ধারিত না, নির্বিচারে তারা সকল প্রাণীর মাংস ভক্ষণ করত , এমনকি কুকুর ও শুকর ও বাদ দিত না ।
মোঙ্গলদের রাজনৈতিক উত্থান:
মোঙ্গলদের প্রাচী ইতিহাস জানা যায় না। দ্বাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মঙ্গোলরা উত্তর চীনের কীন সম্রাজ্যের অধীন হয়ে পড়ে। ১৩৩৮-৩৯ সালের দিকে চেঙ্গিস খানের প্রপিতামহ কাবুল খান কীন সেনাপতিকে পরাজিত করে শক্তিশালী হয়ে উঠেন। তিনি ’খাকান’ উপাধি ধারণ করেন। কাবুল খানের প্রথম সাফল্যে মোঙ্গলদের মধ্যে জাতীয় চেতনা বোধ জাগ্রত হয় । অতঃপর ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে তারা ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী এক মহাজাতিতে পরিণত হয়।
চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মোঙ্গলরাএক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। মঙ্গোলিয়া, চীন-দক্ষিণ রাশিয়া মধ্য এশিয়া, পারস্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত তাদের সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়। তবে মঙ্গোলরা সৃজনশীলতার চেয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের জন্য বেশি সমালোচিত। বর্তমান এই আধুনিক যুগে বিশ্ব মিডিয়ায় মোঙ্গলদের সম্পর্কে তেমন কোন সংবাদ বা তথ্য উত্থাপিত হয় না এক সময়ের বিশ্ব কাঁপানো দুর্ধর্ষ মঙ্গল জাতি আজ নিরবে-নিভৃতে বসবাস করছে। মঙ্গোলরা বিশ্বে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল হয়তোবা এরই ফলাফল হিসেবে আজকে তারা এই অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে মঙ্গল জাতি সম্পর্কে কারো কোন কৌতুহল দেখা যায়না। বিশ্বমিডিয়ায় ও তাদের খবরা-খবর তেমন একটা পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন-
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS (General Education)
Lecturer
Department of Islamic History Culture
No comments:
Post a Comment