Breaking

Monday 29 August 2022

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান 

(Contribution of India to the liberation war of Bangladesh) 


১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান নিয়ে গবেষক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে দু ধরনের মতামত রয়েছে। একদল এতােই আবেগপ্রবণ যে, তারা কিছুতেই স্বীকার করতে চাননা, জাতীয় স্বার্থে ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। দ্বিতীয় একদল বলতে চান বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে ভারতের সৃষ্টি। তবে ভারত রাজনৈতিক, ভৌগােলিক ও মতাদর্শগত কারণেই যে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল একথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা একেবারে নিঃস্বার্থ না হয়ে মিশ্র ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। তা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিঃস্বার্থ ছিল কিনা ও আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিটি রাষ্ট্রই জাতীয় স্বার্থকেই প্রথমে প্রাধান্য দেয় । ভারতও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। মুক্তিযুদ্ধ ভারতের কাছে পররাষ্ট্রনীতিরই একটি বিষয় ছিল ।ফলে ভারত সে দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্য যাই হােক না কেন তাদের মানবিক, সামরিক, আর্থিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা যে মুক্তিযুদ্ধকে ভূরান্বিত করেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।





যেভাবে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে


১৯৭১ সালের ২৪শে মে ভারতের লোকসভায় এক বক্তব্যে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, যে বিষয়টিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটি ভারতেরও অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাওয়া শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করে মিসেস গান্ধী বলেন, ভারতের ভূমি ব্যবহার করে এবং ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে পাকিস্তান তাঁর সমস্যা সমাধানের করতে পারেন না । এটা হতে দেয়া যায়না। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, সীমান্তে পাকিস্তানের সাথে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে। আমরা আলোচনায় বিশ্বাস করি। তবে একই সাথে আমরা আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।


আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা


 

কিসিঞ্জারের চীন সফর:

হেনরি কিসিঞ্জারের চীন সফরের পরেই ইন্দিরা গান্ধী বেশ বিচলিত হয়ে উঠেন। হেনরি কিসিঞ্জার গোপনে চীন সফরের সময় রাওয়ালপিন্ডিতে ও গিয়েছিলেন। চীন সফর শেষে  কিসিঞ্জার ঘোষণা দেন যে, ভারত যদি পাকিস্তান আক্রমণ করে তাহলে চীন হস্তক্ষেপ করবে।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের এই চীন সফরের পর পরই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়তেই থাকে। একদিকে প্রায় এক কোটি শরণার্থী চাপ অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মোকাবেলা করা এই দুই বিষয় নিয়ে ভারত অত্যন্ত।  জটিল অবস্থায় ছিল । এই অবস্থায় ভারত নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করতে থাকে। এবং ভারতের আন্তর্জাতিক মিত্র রাশিয়ার দিকে ঝুকে পরে। 


ভারত-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তি 

এক মাস পরেই ভারত-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই বিষয়টি ভীষণ চিন্তায় ফেল আমেরিকাকে। প্রকৃতপক্ষে ভারত-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধকে উসকে দিয়েছে বলে হেনরি কিসিঞ্জার উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অন্যতম উপদেষ্টা জি.ডব্লিউ চৌধুরীর মতে ভারত-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তির পরেই পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয় । তিনি লিখেছেন, রাশিয়ার সাথে ভারতের চুক্তির পরেই পাকিস্তানের সামরিক সরকার বুঝতে পারে যে ভারতের সাথে একটি যুদ্ধ আসন্ন এবং সে যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হবেই। বস্তুত রাশিয়ার সমর্থনের কারণেই ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে সাহস করেছে। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান কর্তৃক ভারত আক্রমণের পর যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে যায় ভারত। ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে দেয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন।



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার কারণ


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কেন সাহায্য করে সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন লেখক বিশেষ করে ভারতীয় জাত্যাভিমান প্রসূত দৃষ্টিভঙ্গীর লেখকগণ মনে করেন যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল একাত্তরে পাক-ভারত যুদ্ধের ফসল। আবার কোন কোন লেখক-চিন্তাবিদের মতে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে ভারতের সৃষ্টি। উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত লেখক ও গবেষকগণ মনে করেন যে, পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবিক কারণেই ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল। যাহোক, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন দান ও সহযোগিতার পিছনে নিম্নলিখিত কারণগুলোকে চিহ্নিত করা যায়:


  1. রাজনৈতিক ও সামরিক কারণ:

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্যের প্রধান বিবেচনা ছিল রাজনৈতিক। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনেকে বলে থাকেন যে, ভারত তার জন্মশত্রু পাকিস্তানকে দু'পাশে রেখে শুরু থেকেই খুব অস্বস্তিতে ছিল। প্রথম থেকেই পাকিস্তান ভারতের জন্য যেমন ছিল সামরিক হুমকি তেমনি ছিল ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিরও বিরোধী। পাকিস্তানের বিবেচনায় ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্র এবং হিন্দুরা হচ্ছে মুসলিম বিরোধী। পাকিস্তানের এ বিবেচনা ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। তাছাড়া দু'সীমান্তে প্রতিরক্ষার জন্য ভারতকে বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছিল। সুতরাং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সুযোগে পাকিস্তানকে বিভক্ত করার সুযোগ পেয়ে ভারত সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নেয় এবং  পাকিস্তানকে বিভক্ত করতে সর্বাত্মক তৎপড়তা শুরু করে।


  1. নকশাল আন্দোলন দমন: 

ভারতে এক শ্রেণীর বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ক্রমবর্ধমান নকশাল আন্দোলন ও নাগা বিদ্রোহকে দমন করার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কারণ মুক্তিকামী বাঙালির আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের পূর্বাঞ্চল ভারতের জন্য সমস্যা হতে পারতো।


  1.  শরণার্থী সমস্যা: 

ব্যাপক নিধন ও নির্যাতনের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ব্যাপক হারে বাঙালির দেশত্যাগ ও শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ ভারতের জন্য ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রায় এক কোটির মত শরণার্থীর ভার বহন করতে ভারতের বিরাট অংকের অর্থ ব্যয় হতে থাকে। শুধু তাই নয়, শরণার্থীর সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যের ওপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। শরণার্থীর সংখ্যা যত বাড়তে থাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠতা প্রদর্শনের দাবি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ওপর ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতের দক্ষিণপন্থী ও সাম্প্রদায়িক দলসমূহ এ ইস্যুতে কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে পর্যদুস্ত করতে উদ্যত হয়। অন্যদিকে সামরিক নিপীড়ন এবং সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে রাজনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া কোন রাজনৈতিক শক্তিই পাকিস্তানকে জোরালোভাবে চাপ প্রয়োগ করেনি। কিন্তু অন্তহীন শরণার্থীর স্রোত ভারতের জন্য সৃষ্টি করে এক কঠিন বাধ্যবাধকতা। এ অবস্থায় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ব্যতীত যে শরণার্থী ফেরত পাঠানো সম্ভব নয় তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সশস্ত্র সহযোগিতা প্রদান এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে ছাত্র, শ্রমিক ও যুবককে সশস্ত্র ট্রেনিং দানের নীতি ভারত সরকার গ্রহণ করে।


  1. মানবিক কারণ:

সাংবিধানিকভাবে ভারত হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। পক্ষান্তরে পাকিস্তান হচ্ছে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র- যা অধিকাংশ সময় শাসিত হয়েছে সামরিক শাসক দ্বারা। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দর্শন ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা- যা ছিল ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ভারত চেয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক। তাহলে পাকিস্তানে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, সামরিক উত্তেজনা কমবে এবং পাকিস্তানের ধর্মীয় রাষ্ট্রের চরিত্র লোপ পাবে। কিন্তু পাক সামরিক শাসকবর্গ নির্বাচনে বিজয়ীদের ক্ষমতা প্রদান না করে ব্যাপকভাবে হত্যা, ধর্ষণ এবং নিপীড়ন ও নির্যাতন শুরু করলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত নির্বাচনে বিজয়ী বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে সমর্থন করে এবং হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী জনতাকে সামগ্রিক সহযোগিতা করতে তৎপর হয়। 


আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, সীমানা ও ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ


মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও সহযোগিতায় ভারতের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ


১. প্রশিক্ষণ দান:

সেক্টর কমান্ডারদের অধীন নিয়মিত বাহিনীকে ট্রেনিং করানো, তরুণ সম্প্রদায়কে রিক্রুট করা ও প্রশিক্ষণ দান, বিভিন্ন গেরিলা সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দান ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল এ ব্যাপারে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব প্রদান করে এবং ৯ মে তাদের হাতে ন্যস্ত হয় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানেচ্ছুকদের ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব। ইতোপূর্বে (এপ্রিল) বিএসএফ বিক্ষিপ্তভাবে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে যে সাহায্য করছিল সেনাবাহিনী দায়িত্ব গ্রহণের পর মে মাসে তার উন্নতি ঘটে। তবে তরুণদের ট্রেনিং-এর ব্যাপারে ভারতীয় প্রশাসন ছিল দ্বিধাবিভক্ত। নকশালবাদী, নাগা, মিজো প্রভৃতি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তৎপরতা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা সম্বন্ধে ভারতীয় প্রশাসনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত অস্ত্রসমূহ সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের হাতে যে পৌঁছাবে না- এ নিশ্চয়তার অভাবই তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ¡ সৃষ্টি করেছিল। তাই ‘যুব শিবির' ও ‘অভ্যর্থনা শিবির'-এর মাধ্যমে তরুণদের রিক্রুট এবং আওয়ামী পরিষদ দ্বারা সনাক্তের পর তাদেরকে ট্রেনিং ক্যাম্পে ভর্তি করা হতো যেন বামপন্থীরা ট্রেনিংয়ের সুযোগ না পায়। এজন্য প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে আগ্রহীদের তুলনায় ট্রেনিং-এর সুযোগ ছিল সীমিত।


২. মুজিব বাহিনী গঠন: 

ভারত যে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল তার প্রমাণ মুজিব বাহিনী গঠন। মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে নেতৃত্ব যেন কমিউনিস্ট বা চরমপন্থীদের হাতে চলে না যায় সেজন্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শে সজ্জিত একদল তরুণ ও যুবকদের নিয়ে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। অনেকের মতে, মুক্তিযুদ্ধের মাঝপথে খন্দকার মোশতাক সহ আপোষকামী কোন আওয়ামী লীগ নেতা বা অস্থায়ী সরকারের কেউ যাতে পাকিস্তানের সাথে আপোষ করতে না পারে সেজন্য মুজিব বাহিনী গঠন জরুরি হয়ে পড়েছিল। তবে মুজিব বাহিনী গঠন নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।


৩. অস্ত্র প্রদান: 

মুক্তবাহিনীকে ভারত প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করেছিল। শক্তিশালী পাকিস্তানি আর্মির মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় অস্ত্র আমদানি এবং তা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সরবরাহ করে ভারত মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ সরবরাহের জন্য সামরিক খাতে ভারতকে শরণার্থীদের পিছনে ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় করতে হয়েছিল বলে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনৈক কর্মকর্তা জানান।


৪. শরণার্থীদের আশ্রয় দান: 

শরণার্থীদের আশ্রয় দান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের সহযোগিতার আর এক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিন ২০ হাজার হতে ৪৫ হাজার অসহায় নিরস্ত্র বাঙালি ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল (২৬ মার্চ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ)। বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মিলিয়ে প্রায় এক কোটির মত লোক ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। এ বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর পিছনে ভারত সরকারের বিরাট অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব শরণার্থীর জন্য ভারত ও বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে যে অর্থ সাহায্য করেছে তার পরিমাণ ছিল ভারতীয় টাকায় প্রায় ৫০ কোটি । কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের ব্যয় হয় ২৬০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, মোট ব্যয়ের হিসাব ধরা হয়েছিল ৫৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আসা প্রায় নিঃস্ব এক কোটির মতো শরণার্থী- যার মধ্যে অনেকে অসুস্থ কিংবা আহত। তাদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা গৃহনির্মাণ ইত্যাদির জন্য ভারত সরকারকে ব্যাপক প্রস্তুতি ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। এব্যাপারে জাতিসংঘ সহ অন্যান্য বৈদেশিক সাহায্য এসেছিল অনেক পরে। তাই ভারত সরকার সময় মতো সহযোগিতা ও ত্যাগ স্বীকার না করলে শরণার্থীদের পাশাপাশি মুজিবনগর সরকারকে চরম মূল্য দিতে হতো। হয়তো খাদ্য ও চিকিৎসাহীন অবস্থায় মারা যেত অনেকে।


৫. বেতার কেন্দ্রের জন্য ট্রান্সমিটার প্রদান: 

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রবাসী সরকারের (মুজিবনগর সরকারের) প্রচার প্রচারণার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি বেতার কেন্দ্র। তাই ভারত সরকার ৫০ কিলোওয়াটের একটি ট্রান্সমিটার যন্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে ছিল এর রেকর্ডিং স্টুডিও এবং ৩৯, সুন্দরী মোহনস্ট্রিটের ৮ তলা বাড়ির ছাদ হতে অনুষ্ঠান প্রক্ষেপণ করা হতো।


আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের সমাজ ও জনজীবনে ভূ প্রকৃতির প্রভাব




৬. ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর: 

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে হেনরি কিসিঞ্জারের প্রচেষ্টায় এবং পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় আমেরিকার সাথে চীনের বরফ শীতল সম্পর্কের অবসান ঘটে। এর ফলে চীন ও আমেরিকার কাছে পাকিস্তান প্রিয় হয়ে ওঠে- যা ভারতের জন্য ছিল উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ২০ বছরের মৈত্রী চুক্তি করে- যার মূল বিষয় ছিল দু'দেশের কেউ আক্রান্ত হলে একে অপরকে সাহায্য করবে। এর ফলে মুক্তিকামী জনতার মনোবল বহুগুণে বেড়ে যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সামরিক সাহায্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং ভারত আরও দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে সক্ষম হয়।


৭. আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রচারণা: 

প্রথমদিকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কোন মিশন ছিল না। পরবর্তী সময়ে কিছু মিশন স্থাপিত হলেও তা ছিল খুবই সীমিত। তাই যেসব স্থানে ভারতের মিশন ছিল সেসব স্থানে ভারত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা এবং নিরীহ বাঙালির বিরুদ্ধে পাকবাহিনীর অন্যায় আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে তৎপরতা চালিয়েছিল। শুধু তাই নয়, মুসলিম বিশ্ব এবং পশ্চিমা শক্তিবর্গকে পাকিস্তানের পর্যায়ক্রমিক অপপ্রচারের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভারতের সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রথমে দিল্লিতে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূতদের বোঝানো, তারপর বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের কাছে মন্ত্রী পর্যায়ের দূত পাঠানো এবং পরবর্তী পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সহ ৮টি দেশ সফর করার মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোকে তাঁর অবস্থান আংশিকভাবে হলেও বোঝাতে পেরেছিলেন। বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ভারতের সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যম যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, একইভাবে বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শরণার্থীদের দুর্দশা, মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের নিদর্শনসমূহ দেখানোর ব্যবস্থাও ভারতকে করতে হয়েছিল। আমন্ত্রণ জানাতে হয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের।বাংলাদেশের পক্ষে মার্কিন জনমত সংগঠনের ক্ষেত্রে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির ভারত সফর খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। প্রখ্যাত ফরাসি বুদ্ধিজীবী

আঁদ্রে মালরো, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ যদি মুক্তিযুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সবার আগে তিনি সেই ব্রিগেডে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করবেন।এভাবে নানাবিধ তৎপরতার মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে প্রচারণা চালিয়েছিল।


আরও পড়ুন-

বাঙ্গালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি, Ethnographic identity of the Bengali Nation


৮. বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান: 

ভারত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতার এক উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে। এর ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি লাভ করে এবং মুক্তিকামী জনতার মনোবল বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ভারত কঠোর ভাষায় গণহত্যার নিন্দা, নির্যাতিত এবং সহায় সম্বলহীন মানুষের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু করলেও মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের বিষয়টি ভারতের জন্য ছিল খুবই স্পর্শকাতর। কারণ শরণার্থী সম্পর্কে বিস্তর সহানুভূতি, উদ্বেগ ও নিন্দা জ্ঞাপন সত্ত্বেও পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার অধিকার স্বীকারে প্রস্তুত ছিল না। পাকিস্তানের সাথে একই সুরে যুক্তরাষ্ট্র, চীন সহ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহ মনে করত যে, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া মানেই পাক-ভারত যুদ্ধের ঝুঁকি যা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চীনকে উৎসাহিত করবে বলে ভারত মনে করতো। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।


৯. যৌথ বাহিনী গঠন 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সবধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা করলেও ভারত ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এদিকে ২১ নভেম্বর ভারতীয় বাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সমম্বয়ে যৌথবাহিনী গঠিত হয়েছিল ভারতের ব্যবস্থাপনায়। এই বাহিনীই চুড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় অর্জন করা পর্যন্ত।  


সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ: 

যে কোন সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে- এমন একটি চিন্তা ও প্রস্তুতি ভারত  সরকারের মধ্যে জাগ্রত ছিল। মুক্তিবাহিনীর পর্যায়ক্রমে আক্রমণে যশোরের চৌগাছা সহ একের পর এক এলাকা পাকবাহিনীর হাতছাড়া হতে থাকলে পাকিস্তান হঠাৎ করে ৩ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি শহর আক্রমণ করে । ফলে শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ হতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী একসাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। মাত্র ১৮ ঘন্টার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে পাক বিমান বাহিনী প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায়। ভারত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। একের পর এক রণাঙ্গনে পরাজিত হতে থাকে পাক-বাহিনী। বাংলাদেশের বিজয় হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার মাত্র। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাক্সিক্ষত দিন। ৯৩ হাজার সৈন্য সহ পাকবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার জেনারেল নিয়াজী যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এ যুদ্ধে ভারতের প্রায় ৪ হাজার অফিসার ও জোয়ান এবং অসংখ্য বেসামরিক লোক শহীদ হয়। 


১০. সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক জনমত সৃষ্টি: 

বাংলােদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সর্বাত্মক সহযোগীতার পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ,বুদ্ধিজীবীগণ,শিল্পী-সাহিত্যিক ও বেসরকারি সংস্থা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়কে সভাপতি করে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি গঠিত হয়। ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত রবি শংকর আমেরিকার লস এঞ্জেলস-এ বাংলাদেশ কনসার্টের আয়োজন করে দশ লক্ষ ডলার ইউনিসেফকে দিয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জন্য। মকবুল ফিদা হুসেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছবি এঁকে বোম্বের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য। শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন, গায়কেরা বাংলাদেশের জন্য গান গেয়েছেন, নাট্যকর্মীরা নাটক করেছেন, ঋত্বিক ঘটক, শুকদেব আর মেহতারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সব মিলিয়ে ভারতের শিল্পী, সাহিত্যিক, তখন বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কোনও না কোনও ভাবে বাংলাদেশকে সহযোগীতা করেনি এমন ব্যক্তি খুব খুজে পাওয়া দুস্কর। 


ভারতের সামরিক ক্ষয়ক্ষতি: 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ভূমিকা রাখতে ভারতকে হারাতে হয়েছিল বহু অফিসার ও সৈনিককে। ১৯৭১ সালে র্পূব ও পশ্চিম রণাঙ্গন মিলে শহীদ ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা ৩৬৩০ জন, নিখোঁজ ২১৩ জন এবং আহত ৯৮৫৬ জন। যাঁদের রক্ত এই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে মিশে রয়েছে।



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ, গভীর ও ঘনিষ্ঠ। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যাপারে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রচেষ্টার পাশাপাশি ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রচার মাধ্যম ও কূটনৈতিক মাধ্যমে ভারত বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিল যে, অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের নামে  বাংলাদেশে যে ভাবে গণহত্যা চারানো হচ্ছে  তা প্রতিহত করা আর্ন্তজাকি সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব। ভারত মানবিক প্রেক্ষাপট হতেই বিষয়টি বিচার করছিল বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ভারতের ওপর শরণার্থী সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ব্যতীত এ সমস্যার আর কোন সমাধান ভারতের হাতে ছিল না। সুতরাং গণহত্যার বিরুদ্ধে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি শরণার্থী সমস্যা ও অন্যান্য আরও কিছু কারণে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করে। এমনকি ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ হতে বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সাথে মিলিতভাবে যৌথ বাহিনী গঠন করে এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। এ যুদ্ধে ভারতের নিয়মিত বাহিনীর প্রায় ৪ হাজার সৈন্য এবং আরও অনেক বেসরকারি লোকের প্রাণহানি ঘটে। প্রচুর অর্থ ও গোলাবারুদ ব্যয় হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা সহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আর্থ-সামাজিক ও আইন-শৃ´খলা ব্যবস্থার ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ত্যাগ স্বীকার ছিল অতুলনীয়। 


আরও পড়ুন-

বিদায় হজ্বের ভাষণ এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক ঘোষিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কারাবলী




Md. Billal Hossain

B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka

BCS General Education

Lecturer

Department of Islamic History & Culture

Chandpur Govt. College, Chandpur.

No comments:

Post a Comment