Breaking

Friday, 30 September 2022

আফগানিস্থানে বৃটিশ ফরওয়ার্ড পলিসি

 

আফগানিস্থানে বৃটিশ ফরওয়ার্ড পলিসি

(British Forward Policy in Afghanistan)


ফরওয়ার্ড পলিসি কী ? আফগানিস্তানে বৃটিশ ফরওয়ার্ড পলিসি কিভাবে কার্যকর করা হয়েছিল? 


ব্রিটিশ ফরওয়ার্ড পলিসি আফগানিস্থানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র নীতি রিলেটেড একটি বিষয়। এটি আফগানিস্তানের প্রতি বৃটেনের আগ্রাসী মনোভাবের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতির বাস্তবায়ন করা হয়। মধ্যএশিয়াতে রূশ-বৃটেন ক্ষমতার দ্বন্দ্বের যাঁতাকলে পড়ে নিষ্পেষিত হয় আফগানিস্তান। এই পলিসি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, যা ছিল আফগানিস্থানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম আঘাত। এর মাধ্যমে আফগানিস্থানের বহু বিষয় বৃটেনের হাতে তুলে দেয়া হয়। তবে এই নীতির কার্যকারিতা ছিল সাময়িক। বৃটেনে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ঘটলে আফগানিস্থানে ব্রিটিশ ফরওয়ার্ড পলিসির পরিবর্তন ঘটে । তথাপিও বেশ কিছুকাল যাবত আফগানিস্থানে ব্রিটিশ প্রভাব স্থায়ী হয়েছিল।






ফরওয়ার্ড পলিসি কী (What is Forward Policy) ?

ফরওয়ার্ড পলিসি হল আফগানিস্থানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন হস্তক্ষেপের একটি কৌশল। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিজরেলি  ব্রিটিশ ভারতের নিরাপত্তার অজুহাতে এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া ও ভারতের মাঝখানে আফগানিস্তানকে একটি বাফার স্টেট হিসেবে রেখে আফগান আমিরকে ব্রিটিশ পক্ষপাত দুষ্ট রাখা।


দুটি প্রক্রিয়ায় এই পলিসি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়-

  1. বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে

  2. বলপ্রয়োগ করে প্রতিনিধি বসিয়ে বা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। 


এখানে ব্রিটেন দ্বিতীয় নীতি গ্রহণ করে। আফগানিস্থানের রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তা নিয়ন্ত্রণ করার এই বলপ্রয়োগ নীতি ই হলো ফরোয়ার্ড পলিসি। এর মূল কথা হলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করার জন্য আফগানিস্থানে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।




আরও পড়ুন-

মুহাম্মদ আলী পাশা এবং আধুনিক মিসর



ফরওয়ার্ড পলিসি প্রবর্তনের কারণ:

ব্রিটিশরা পাঞ্জাবে দখল করে নিলে ভারতের সীমান্ত আফগানিস্তানের সাথে মিলে যায়। আফগান জনগণের প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করার জন্য আসতো। আবার অনেকে সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করত। এতে বৃটিশরা তাদের ঔপনিবেশিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষতির সম্ভাবনায় ভীত ছিল।


অন্যদিকে উত্তর দিক থেকে রাশিয়া যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে রাশিয়া ভবিষ্যতে আফগানিস্তান দখল করে নিতে পারে। এতে ব্রিটিশ ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাছাড়া ১ম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধে বৃটেনের চরম বিপর্যয় এবং আফগানিস্তানে শের আলী খানের আমলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে আফগানিস্থান এর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশ ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তারা এই নীতি গ্রহণ করে।


ফরওয়ার্ড পলিসির প্রক্রিয়া ও বিতর্ক:

আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ নীতির প্রশ্নে প্রক্রিয়া কী হবে এ নিয়ে বৃটিশ কর্মকর্তারা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। একটি দল বলে দুই দেশের মধ্যে একটি ন্যাশনাল বাউন্ডারি করা দরকার আবার কেউ বলে রাশিয়া এবং আফগানিস্তানের সাথে আলোচনা করে একটি বিজ্ঞানসম্মত সীমানা নির্ধারণ করা দরকার।  শেষ পর্যন্ত তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।  


লিবারেল পন্থী: 

এদের মধ্যে ছিলেন নর্থব্রুক, লর্ড মেয়ো এবং জন লরেন্স। লিবারেলপন্থীরা মনে করে আফগানিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব করে সম্পর্ক ভাল রাখা দরকার। আফগানিস্তানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।


চরমপন্থী: 

এদের মধ্যে ছিলেন বেঞ্জামিন ডিজরেলি, সলসবেরি এবং লর্ড লিটন। চরমপন্থীরা মতামত দেয় যে- নিরাপত্তার স্বার্থে আফগানিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব করা যেতে পারে, তবে তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে। তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে প্রতিনিধি বসিয়ে আফগানিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাতেও যদি কার্য সিদ্ধি না হয় তবে আফগানিস্তান ভূখণ্ড দখল করে ব্রিটিশ ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা  ছিল ফরওয়ার্ড পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়।


আরও পড়ুন-

সুয়েজ খালের ইতিহাস এবং মিসরের স্বাধীনতা ও জাতীয় জীবনে সুয়েজ খালের প্রভাব



ফরওয়ার্ড পলিসির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া: 

আমির দোস্ত মুহাম্মদ মারা গেলে তার পুত্রদের মাঝে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব দেখা দেয় । প্রথমে আফজাল খান জয়ী হলেও চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেন শের আলী খান। তার অভ্যন্তরীণ বিশৃংখলার সুযোগে রাশিয়া উত্তর দিকের বহু এলাকা দখল করে নেয়। এসময় রাশিয়াকে ঠেকাতে লর্ড নর্থব্রুক আফগানের সাথে বন্ধুত্ব করার নীতি গ্রহণ করেন। এসময় লিবারেল পন্থীরা শক্তিশালী ছিল। তাই লর্ড মেয়ো এবং জন লরেন্স এখানে উদারনীতির পক্ষ অবলম্বন করেন।


আফগান আমির রাশিয়ার সাথে সীমান্ত নির্ধারণের প্রস্তাব দিলে রাশিয়া রাজি হয়। কিন্তু দক্ষিনে এগিয়ে এসে রাশিয়া খিবা দখল করে নিলে তাদের সদিচ্ছা নিয়ে আমিরের সন্দেহ হয়। আমির রাশিয়ার বিরুদ্ধে বৃটেনের সহায়তা কামনা করেন। কিন্তু নর্থব্রুক আমিরকে এসময় কোন প্রকার সামরিক সহায়তা দিতে রাজি হননি।


এদিকে ব্রিটেনে টরী দল ক্ষমতায় আসলে তাদের আফগান নীতির পরিবর্তন হতে থাকে। উদারপন্থীরা পদত্যাগ করেন এবং এক্সট্রিমিস্টরা শক্তিশালী হয়। প্রধানমন্ত্রী ডিজরেলি ফরওয়ার্ড পলিসি কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে 1876 সালে লর্ড লিটন কে ভাইসরয় করে পাঠান। 




লর্ড লিটনের পদক্ষেপ: 

লর্ড লিটন ফরওয়ার্ড পলিসি কার্যকর করার পদক্ষেপ নেন। আফগানিস্তান প্রশ্নে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন-


আফগান আমিরকে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ কল্পে বৃটেনের  সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। তা না করলে আফগানিস্তান দখল করে একাধিক আমিরের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হবে। এতে এর নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। তিনি হিরাতে একজন  বৃটিশ রেসিডেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেন। যদি আমির এতে রাজি হয় তাহলে- 


  1. তার পুত্রকে উত্তরাধিকারী মেনে নেয়া হবে; 

  2. বহিঃ শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য দেয়া হবে; 

  3. আফগানিস্তান পুনর্গঠনে সাহায্য দেওয়া হবে।  


কিন্তু আমির এই প্রস্তাব মেনে নেন নি।  লর্ড লিটন এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন এবং একটি ব্রিটিশ মিশন প্রেরণ করেন। কিন্তু আমির দুটি কারণে এই মিশন গ্রহণ করেননি। আমির বলেন যে; 

 

  1. এই মিশনের নিরাপত্তা দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়; 

  2. এই মিশন গ্রহণ করলে রাশিয়ার কাছ থেকেও অনুরোধ মিশন তাকে গ্রহণ করতে হবে। 



পেশোয়ার আলোচনা:

লর্ড লিটন এতে অসন্তুষ্ট হন। সীমান্তের পার্শ্ববর্তী কুয়েটাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তিনি এটা দখল করে নেন। আমির এর প্রতিবাদ করলে লিটন আলোচনার প্রস্তাব দেন। 1877 সালে দুই পক্ষের মধ্যে পেশোয়ারে আলোচনা হয়। কিন্তু কোনো পক্ষই মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। লিটন পরিকল্পনামাফিক আফগান জাতিগোষ্ঠীর মাঝে অপতৎপরতা চালাতে থাকেন। 


আরও পড়ুন-


ইউরোপীয় রাজনীতির প্রভাব: 

এদিকে 1877 সালে রুশ-তুর্কি যুদ্ধের পর স্যানস্টেফানো চুক্তির ফলে ব্রিটেন ক্ষিপ্ত হয়। 1878 সালে বৃটেন রাশিয়াকে বার্লিন কংগ্রেস মেনে নিতে বাধ্য করে । এতে রাশিয়া ব্রিটেন এর উপর ক্ষিপ্ত ছিল। তাই রাশিয়ার জার আফগান আমিরের সাথে যোগাযোগ করে এবং স্টলিটকের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের একটি মিশন পাঠায়। আমিন মিশন গ্রহণ করেন এবং একটি মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করেন। তবে মিশন কিছুদিন পর প্রত্যাহার করা হয়। এ সময় লর্ড লিটন নেভিল চেম্বারলেন এর নেতৃত্বে একটি মিশন আফগানিস্তানে পাঠালে আমির তা গ্রহণ করেন নি। ফলে লর্ড লিটন ক্ষিপ্ত হন এবং 1878 সালের 20 নভেম্বর একটি চরমপত্র দেন। এতে বলা হয়-


আফগান আমিরকে অবশ্যই তার দরবারে একজন ব্রিটিশ প্রতিনিধি বা রেসিডেন্ট রাখতে হবে এবং চেম্বারলেন কে গ্রহণ না করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।  কিন্তু আমি এর কোনটাই করেননি


এই কারণে লর্ড লিটন ফরওয়ার্ড পলিসির চূড়ান্ত পর্যায়ে বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করেন যা দ্বিতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করে। 


২য় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ:

উপর্যুক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে লর্ড লিটন আফগানিস্তান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তিন জন জেনারেল রবার্ট, স্টুয়ার্ট এবং স্যামুয়েলের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী 1878 সালের 21 শে নভেম্বর খাইবার গিরিপথ দিয়ে আফগানিস্থানে প্রবেশ করে। আক্রমণ ঠেকাতে আমির রাশিয়ার সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু ঠান্ডার অজুহাতে রাশিয়া সাহায্য দিতে অস্বীকার করে। মৈত্রী চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবারও সাহায্য চাওয়া হলে রাশিয়া ব্রিটেন এর সাথে সমঝোতা করে নেয়ার উপদেশ দেয়।


ত্রিমুখী আক্রমণে আমির শের আলী খানের প্রতিরোধে ভেস্তে যায়। বিশেষ বাহিনী একরকম বিনা বাধায় আফগানিস্তান দখল করে নেয়। তারা কাবুল অধিকার করে। পাল্টা আক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমির পালিয়ে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু পথিমধ্যে 1879 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাজার-ই-শরীফ এ  তিনি মারা যান।


গেন্দামার্ক চুক্তি (Treaty of Gandamark): 

আমির শের আলী খান পুত্র ইয়াকুব খান কে সিংহাসনে বসিয়ে গিয়েছিলেন। ইয়াকুব খান কোন প্রতিরোধই করতে পারেন নি। 1879 সালের মে মাসে ইয়াকুব খান ব্রিটিশদের সাথে শান্তিচুক্তি স্থাপন করেন যা গেন্দামার্ক চুক্তি (Treaty of Gandamar) হিসেবে পরিচিত। এতে বলা হয়-


  1. আফগানিস্তানের নীতি নিয়ন্ত্রণ করবে বৃটেন;

  2. আমির কাবুল সহ অন্যান্য স্থানে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট এর অবস্থান মেনে নিবেন;

  3. খাইবার ও খুররম এলাকা ব্রিটিশদের হাতে ছেড়ে দিবেন;

  4. আমির এর বার্ষিক 60000 পাউন্ড সাহায্য পাবেন;


এই চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ বাহিনী প্রত্যাহার করা হয় এবং কাবুলে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে কাভাগনারীকে  নিয়োগ দেয়া হয়। এর মাধ্যমে ফরওয়ার্ড পুলিশি মোটামুটি কার্যকর করা হয়।


ফরওয়ার্ড পলিসির প্রতিক্রিয়া:

এইভাবে আফগানিস্তান দখল করে নেয়া  এবং রেসিডেন্ট নিয়োগ ও বিদেশিদের অবস্থান আফগান জনগণ মেনে নিতে পারেনি। তারা এর প্রতিবাদ করে। কয়েক মাসের মধ্যেই বালাহিসরে অবস্থিত ব্রিটিশ মিশনের দপ্তর অগ্নিদগ্ধ হয়। কাভাগনারীসহ বহু বৃটিশ প্রাণ হারায়। ফলে বৃটিশরা আবারো আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে তা দখল করে নেয়। ইয়াকুব খান কে বন্দি করে ভারতে নির্বাসনে পাঠানো হয়। কিছুদিন আমিরের পদ শূন্য থাকে।  


আরও পড়ুন-

রেজা শাহ পাহলভী এবং ইরানের আধুনিকায়নে তাঁর অবদান



আমির আব্দুর রহমান এর উত্থান:

এই অবস্থায় রাশিয়াতে আশ্রিত আফজাল খান এর পুত্র আব্দুর রহমান খান দেশে ফিরে আসেন রাজনীতিতে তার ভাগ্য পরীক্ষার জন্য। ফেরার পথে কুহিদ আমান উপত্যকায় তিনি নিজেকে আমির বলে ঘোষণা করেন। জনগণ তাকে সমর্থন দান করে। ব্রিটিশরা এসময় আফগানিস্থানে তাদের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের অনুগত একজন লোক খুজতে ছিল যাকে আফগানিস্থানে বসানো যায়। এসময় আমির আব্দুর রহমানকে নিয়ে তারা ভাবতে শুরু করে এবং ভবিষ্যতে আরেকটি যুদ্ধ এড়াতে তারা আমির আব্দুর রহমানকে স্বীকৃতি দেয় এবং 1880 সালে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। আব্দুর রহমানের সাথে ব্রিটিশদের চুক্তি হয়। 1880 সালের এই চুক্তিতে বলা হয়-


  1. ব্রিটিশ সরকার আব্দুর রহমানকে আফগানিস্তানের কান্দাহার ব্যতীত সমগ্র অঞ্চল হস্তান্তর করবে;

  2. ব্রিটিশ সরকার কাবুল থেকে তার রেসিডেন্ট প্রত্যাহার করবে; 

  3. শের আলীর দ্বিতীয় পুত্র আইয়ুব খানের দখলে থাকা হিরাত নগরী আব্দুর রহমানকে হস্তান্তর করতে হবে; 

  4. ইংল্যান্ড ব্যতীত আফগানিস্তান অপর কোন বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না; 

  5. আফগানিস্তান যদি ব্রিটিশ অনুসৃত পররাষ্ট্র নীতি পালন করে তবে বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্রিটেন সাহায্য করবে; 

  6. আফগানিস্তান একটি মধ্যবর্তী রাষ্ট্র (বাফার স্টেট) হিসেবে পরিগণিত হবে; 

  7. আব্দুর রহমান ব্রিটিশ সরকার থেকে বার্ষীক অনুদান লাভ করবেন। 


আমির আব্দুর রহমান সকল শর্তাবলী মেনে নিয়ে তাদের আনুকূল্য লাভ করে দেশ শাসনে আত্মনিয়োগ করেন।


মূল্যায়ন:


পি. ই. রবাটর্স গেন্দামার্ক চুক্তিকে লিটনের আফগান নীতির চূড়ান্ত সফলতা বলে মনে করেন। ডিজরেলির মতে এ চুক্তি ভারতীয় ব্রিটিশ সরকারকে একটি বিজ্ঞানসম্মত ও পর্যাপ্ত সীমা প্রদান করে। কিন্তু বাস্তবে গেন্দামার্ক চুক্তি এবং ফরওয়ার্ড পলিসির কার্যকারিতা ছিল ক্ষণস্থায়ী। কাভাগনারীর হত্যা গেন্দামার্ক  চুক্তির কার্যকারিতা এবং ফরওয়ার্ড পলিসির ব্যর্থতা প্রমাণ করে। আর এজন্য লর্ড লিটন কি দায়ী করা হয়।


যদিও এই পলিসি এবং দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধ ছিল আফগানিস্তানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম আঘাত এবং এর মাধ্যমে শের আলী খান এবং ইয়াকুব খান এর ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছিল তথাপিও ব্রিটিশরা এখানে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করতে পারেনি। 


1880 সালে ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তন হলে আফগান নীতির পরিবর্তন হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোন ফরওয়ার্ড পলিসির চরম বিরোধীতা করেন এবং এই নীতি বাতিল করেন। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকেন।ভাইসরয় হিসেবে লর্ড লিটনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন লর্ড রিপন। ফরওয়ার্ড পলিসি বাতিল হলে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অহেতুক হস্তক্ষেপ থেকে বৃটিশ সরকার বিরত থাকে। আমির আব্দুর রহমানের ক্ষমতাগ্রহণের 12 দিনের মাথায় ব্রিটিশ সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। তবে আফগানিস্তান বৃটিশ প্রভাবাধীনে  থাকলেও রুশ প্রভাব মুক্ত হয়।


পরিশেষে বলতে পারিনি ফরোয়ার্ড পলিসি স্বাধীনচেতা আফগানদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাস্তবে সফল হয়নি। তবে আফগানিস্তানকে ব্রিটিশ প্রভাব অধীনে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমির আব্দুর রহমান আভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বাধীন থাকলেও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রভাব মেনে নিয়েছিলেন।স অবশ্য এছাড়া তখন তার উপায়ও ছিল না কারণ তখন ক্রমবর্ধমান রুশ আগ্রাসন বৃটিশ সহযোগিতা ছাড়া তা মোকাবেলা করা সম্ভব ছিল না। তাঁর দীর্ঘদিনের শাসনামলে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।  



আরও পড়ুন-

প্রাক-মুসলিম মালয় জগতের উপর ভারতীয় ও চৈনিক প্রভাব: স্বরূপ ও তাৎপর্য





প্রিয় পাঠক,

যে কোন ভূল-ত্রুটির সংশোধনী বা পরামর্শ থাকলে ওয়েব সাইটে পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে লিখুন। ইসলামের ইতিহাস, স্বাধীন-বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, ইসলামের বিধি-বিধান সংক্রান্ত কোন প্রবন্ধ বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে লেখা কোন প্রবন্ধ প্রকাশ করতে চাইলে আপনার লেখা এবং পরিচিতিসহ মেইল করুন। 

 

Md. Billal Hossain

B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka

BCS General Education

Lecturer

Department of Islamic History & Culture

Chandpur Govt. College, Chandpur.

 


No comments:

Post a Comment