ইরানের পাহলভী বংশ (1925-1979)
রেজা শাহ পাহলভী (1925-1941)
রেনেসাঁ প্রসূত ইউরোপীয় আধুনিকতা ইউরোপের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বময় ছড়াতে থাকলে মুসলিম বিশ্বের মধ্যে তুরস্ক সর্বপ্রথম এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। কামাল পাশার সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে রেজা শাহ পাহলভী ইরানের আধুনিকায়নে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইরানের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানো এবং ইরানের আধুনিকীকরণে তাঁর অবদান স্মরণীয়। অতি জটিল মুহূর্তে ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বীয় মেধা, দক্ষতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা মাধ্যমে ব্যাপক সংস্কার সাধন করে তিনি ইরানকে সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে পরিচালিত করেন। তিনি ইরানে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পাহলভী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
রেজা শাহ এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
রাজা শাহ এর প্রকৃত নাম রেজা খান। 1878 সালের 14 ই মার্চ ইরানের মাজান্দারানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্বাস আলী খান এবং দাদা মুরাদ আলি খান উভয়ই সেনাবাহিনীর লোক ছিলেন। অল্প বয়সে তার পিতা মারা যান। 16 বছর বয়সে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি কসাক ব্রিগেডের একজন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি তার যোগ্যতার প্রমান দেন। একপর্যায়ে তিনি কসাক ব্রিগেডের প্রধান হন। কসাক ব্রিগেডের মাধ্যমেই ইরানে রেজা শাহের সামরিক ও রাজনৈতিক উত্থান ঘটে ।
আরও পড়ুন-
ক্ষমতায় আরোহন ক্ষমতায় আরোহন:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অ্যাংলো-ইরান চুক্তির ফলে ইরান যখন বৃটেনের প্রভাবাধীনে চলে যাচ্ছিল তখন ইরানকে রক্ষার জন্য 1921 সালে জিয়াউদ্দিন তাবাতাবাই এর সহায়তায় রেজা খান এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। তাবাতাবাই প্রধানমন্ত্রী হলেও মূল ক্ষমতা থাকে রেজা খানের হাতে। রেজাখান যুদ্ধ মন্ত্রী ছিলেন। অল্প কয়েক মাসে পাঁচটি মন্ত্রিসভার বদল হয়। 1923 সালে আহমদ আলী শাহ রেজাকানকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। কিন্তু কার্যত ইরান রেজা খানের নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছিল। 1925 সালে ইরানের মজলিস রেজাখানকে পারস্যের শাহ ঘোষণা করে। রেজা খান ’রেজাশাহ’ নাম ধারণ করেন। 1926 সালের 25 এপ্রিল তার অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে তিনি পারস্যের প্রাচীন শব্দ ’পাহলভী’ উপাধি গ্রহণ করে ইরানের পাহলভী বংশের সূত্রপাত করেন। রেজাশাহের উত্থানের মাধ্যমে ইরানে কাজার বংশের সমাপ্তি ঘটে এবং পাহলভী বংশের সূত্রপাত ঘটে।
রেজা শাহের উদ্দেশ্য:
ক্ষমতা গ্রহণের পর রেজা শাহ পাহলভী কয়েকটি লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে সংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কামাল পাশার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি জাতীয় ঐক্য স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য গুলো ছিল নিম্নরূপ-
- কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করে ইরানের জাতীয় ঐক্য স্থাপন;
- অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন;
- প্রগতিশীল বিরোধী ভাবধারার অবসান ঘটিয়ে ইরানকে একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা;
- বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করা;
- অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ও প্রভাব দূর করা;
- সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করা এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিনি তার সংস্কার কাজে শুরু করেন।
আরও পড়ুন-
রেজা শাহ পাহলভীর সংস্কারাবলী:
সামরিক সংস্কার
রেজা শাহ সামরিক ব্যক্তি ছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রতি তার অনুরাগ ছিল বেশি। জাতীয় ঐক্য স্থাপন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন ও বিদেশী প্রভাব মুক্ত থাকতে হলে ইরানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর দরকার ছিল। তখন ইরানের একক কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ সেনাবাহিনী ছিল না। তখন রাশিয়ার সৃষ্ট কসাক ব্রিগেড, জার্মান সৃষ্ট দেহরক্ষী বাহিনী এবং বৃটেনের সৃষ্ট সাউথ পার্শিয়ান রাইফেলস বিদ্যমান ছিল। এসব বাহিনী তিনি ভেঙে দেন এবং জাতীয় সেনা বাহিনী গঠন করেন। ভালোভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যুদ্ধ মন্ত্রী থাকাকালে তিনি এ কাজটি ভালোভাবে করতে পেরেছিলেন। সামরিক বিষয়ে কোনো বাধাই তিনি মানতেন না। 1925 সালে 21 বছর বয়স্ক সকল যুবককে সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেন। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশে প্রেরণ করেন। অস্ত্রসজ্জিত বহু গাড়ি বিমান ক্রয় করেন। টর্পেডো বাহি যুদ্ধজাহাজ এবং ভারী কামানবাহী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাহাজ ক্রয় করেন। নৌ সেনাদের প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ইতালির নৌ বিদ্যালয়ে পেরণ করেন। ইউরোপীয় কায়দায় তিনি সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। এদের মাধ্যমে তিনি জিলান, খুজিস্তান, আজারবাইজান এবং খোরাসানে সৃষ্ট বিদ্রোহ দমন করেন।
প্রশাসনিক সংস্কার:
নবগঠিত সেনাবাহিনী দিয়ে সকল গোত্রের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সমগ্র ইরানকে তিনি একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আনয়ন করেন। প্রশাসন পরিচালনার জন্য দক্ষ আমলা বাহিনী গড়ে তোলেন। নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয়তা এবং অন্যান্য যোগ্যতার ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো। পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি, বয়স সীমা নির্ধারণ, পেনশন ইত্যাদি চালু করেন। তিনি প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করেন। গোটা দেশকে দিয়ে দশটি আস্তানে এবং 26 টি শাহরাস্তানে বিভক্ত করেন। দক্ষ লোকদেরকে প্রদেশ পাল নিয়োগ দেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার, মেয়রসহ বহুবিধ পদের সৃষ্টি করেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার:
অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা ছিল তাঁর লক্ষ্য। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক মুক্তি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তিনি আমেরিকান অর্থনৈতিবিদ আর্থার মিলসপকে অর্থ উপদেষ্টা নিয়োগ দেন। তারপর জার্মান বিশেষজ্ঞ লিন্ডেন ব্লাটকে নিয়োগ দেন। তাদের প্রচেষ্টা রাষ্ট্রীয় আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রীয় ভূমি, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে কর আদায় করা হয়। 1928 সালে তিনি ইরানের জাতীয় ব্যাংক ব্যাংক-ই-মিল্লি প্রতিষ্ঠা করেন 1930 সালে বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং চেম্বার অফ কমার্স প্রতিষ্ঠা করেনg 1937 সালে বাণিজ্যিক বীমা আইন ও স্বাধীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন 1930 সালে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড এক্ট’ জারি করে স্বর্ণ মুদ্রা চালু করেন এবং দশমিক ওজন পদ্ধতি চালু করেন। 1941 সালে তিনি ট্যারিফ এক্ট জারি করেন।
শিল্পায়ন:
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রেজা শাহ শিল্পায়নের প্রতি গুরুত্ব দেন। দেশি-বিদেশি ব্যক্তিগত উদ্যোগ কে তিনি উৎসাহিত করেন। স্থাপিত কারখানা পাঁচ বছরের জন্য করমুক্ত করেন। যন্ত্রপাতি আমদানিতে সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারি তদারকিতে ভারী শিল্প গড়ে ওঠে। সুগার, কটন, টেক্সটাইল, সিল্ক, ইট-সিমেন্ট, এবং ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলা হয়। উত্তরের বন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জীবন দেয়া হয়। সংশিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে শিল্পের অগ্রগতি সাধিত হয়।
আরও পড়ুন-
তৈল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার:
রেজা শাহের আমলে অ্যাংলো ইরানিয়ান তেল কোম্পানি তেল উৎপাদন বাড়লেও ইরান সামান্য লভাংশ পেত। তাই তিনি তাদের সাথে চুক্তি বাতিল করে দেন। এতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হয়। 1933 সালে আবার চুক্তি করা হয় এতে রেজা শাহ চাপ প্রয়োগ করে সরকারের প্রাপ্ত লভ্যাংশ ও সালামি, কর প্রভৃতি বৃদ্ধি করতে বাধ্য করেন। এতে তেল সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় চার গুণ বৃদ্ধি পায়।
কৃষির উন্নয়ন:
রেজা শাহ 1933 সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাংশকে কৃষি ব্যাংকে পরিণত করেন। কৃষকদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দানের ব্যবস্থা করা হয়। 1937 সালে ল্যান্ড ডেভলপমেন্ট এক্ট জারি করেন এবং সেচ প্রকল্প চালু করেন। আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ, কৃষি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং আদর্শ খামার স্থাপন করা হয়। কৃষি সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেয়া হয়। ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন করা হয়। এতে প্রান্তিক চাষীরা উপকৃত হয়
বিচার বিভাগের সংস্কার:
আইন ও বিচার ব্যবস্থায় রাজা সবচেয়ে বেশি প্রাশ্চাত্য নীতি অনুসরণ করেন ।1927 সালে তিনি ফরাসি বিচারব্যবস্থার আলোকে একক বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং সাধারন বিচারব্যবস্থায় ধর্মীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করেন। তিনি কেপিচেুলেশন সুবিধা বাতিল করেন। 1931 সালে বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ করা হয়। বিবাহ এবং জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে শরিয়া আইন রাখা হলেও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে সিভিল কোর্ট কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকার চালু করেন।
শিক্ষা সংস্কার
ইরানের স্থবির শিক্ষাব্যবস্থাকে রেজা শাহ ঢেলে সাজান। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য।মিশনারী শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল এবং শিক্ষায় আলেমদের প্রভাব হ্রাস করেন। প্রাশ্চাত্য ধারায় ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা এবং বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেন। শিক্ষাব্যবস্থায় ফরাসি উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয় এবং উচ্চ শিক্ষা পরামর্শ দপ্তর খোলা হয়। কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করেন। এজন্য পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। 1935 সালে 6টি অনুষদ নিয়ে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেন। আরবীর প্রভাব দূর করতে ফার্সি ভষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হয়। স্কাউট চালু এবং বিনোদনের জন্য স্টেডিয়াম স্থাপন করেন।নতুন টেক্সট প্রণয়ন করা হয়। বিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়।
আরও পড়ুন-
সামাজিক সংস্কার:
মধ্যযুগীয় ধর্মভিত্তিক সমাজ বিলুপ্ত করে রেজা শাহ একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সমাজে মোল্লা শ্রেণীর প্রাপ্ত সুবিধা বাতিল করেন এবং অভিজাত শ্রেণীর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় ক্রিয়াশীল ছিল তাদেরকে ক্ষমতাহীন করেন। সমাজে পাশ্চাত্য রীতি-নীতি চালু করেন। মেয়েদের জন্য শিক্ষা, চাকরি, স্কাউট এবং খেলাধুলা উন্মুক্ত করা হয়। বিবাহ করণে সীমারেখার আরোপ করা হয় এবং নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়।
সাংস্কৃতিক সংস্কার:
রেজা শাহ প্রাচীন ইরানি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করেন। পুরুষদের জন্য ইউরোপীয় পোশাক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করেন। 1928 সালে প্রাশ্চাত্য ড্রেস চালু করেন। মহিলাদের হিজাব নিষিদ্ধ করা হয় এবং পাশ্চাত্য পোশাক পরতে নির্দেশ দেয়া হয়। তার স্ত্রী ও মেয়ে বিনা হিজাবে ইউরোপীয় পোশাকে জনসমক্ষে হাজির হয়। টুপি-পাগড়ির পরিবর্তে পাহলভী শিরোভূষণ বাধ্যতামূলক করা হয়। পারস্য ভাষাকে আরবি প্রভাব মুক্ত করা হয়। তিনি ধর্মীয় পোশাক পরিধানের জন্য সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিধান চালু করেন। পুরাতন পারস্য সৌর পঞ্জিকা চালু করেন এবং মহররমের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেন।
জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন:
রেজা শাহ জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্যারিসের লুই পাস্তুর ইনস্টিটিউট এর মত তেহরানে একটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। শল্যচিকিৎসা রীতি চালু করেন। তার প্রচেষ্টায় 1935 সালে প্রতি 4000 জনে একজন ডাক্তার তৈরি হয়।1940 সালে জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থাপন করেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন:
সমগ্র রাজ্যে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য রেজা শাহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করেন। উত্তর ও দক্ষিণে ট্রান্স ইরানিয়ান রেলপথ নির্মাণ করেন। 1937 সালে ইরান নিজস্ব বিমান সার্ভিস চালু করে। 1940 সালে বেতার এবং 1941 সালে টেলিফোন চালু করা হয়।
পররাষ্ট্র নীতি:
রেজা শাহ তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি গুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নীতি গ্রহণ করেন। তার বিদেশনীতি ছিল ভারসাম্যপূর্ণ।তবে এক পর্যায়ে তিনি জার্মানির প্রতি ঝুঁকে পড়েন প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেন; কিন্তু তিনি তার এই নীতিতে টিকে থাকতে পারেন নি। ব্রিটেন ও রাশিয়া ইরান দখল করে নেয়।
আরও পড়ুন-
সমালোচনা/ রেজা শাহ কতটুকু সফল হয়েছিলেন:
রেজা শহি ইরানের জাতীয় ঐক্য স্থাপন এবং বিদেশি প্রভাব মুক্তকরণে সম্পূর্ণ সফল হয়েছিলেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি বহুলাংশে সফল হয়েছেন; তবে সামাজিক সংস্কার এবং দেশের আধুনিকায়নে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেননি। এর মূল কারণ আলেম শ্রেণীর বিরোধিতা। কেননা উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি তিনি বেশকিছু ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তবে অনেকে মনে করেন তিনি কামাল আতাতুর্কের মত উদার ছিলেন না। তিনি নিজে লোভী এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি নিজেই আধুনিকতার বাস্তব জ্ঞান জানতেন না বলে অনেকে মনে করেন। তার এই কর্মসূচি চালিয়ে দেওয়া নেওয়ার মতো কোনো শক্তি ছিল না। তিনি কোন দল গঠন করেন, নির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি দেননি, বক্তৃতা করেননি এবং প্রচার করার মতো কোনো মতাদর্শ ছিলনা। ইরানে তার কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তার চিন্তা অপেক্ষা সমাজ পিছিয়ে ছিল। এছাড়া সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থা তার পুরোপুরি সফল না হওয়ার অন্যতম কারণ।
মূল্যায়ন
কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকলেও রেজা শাহ পাহলভী ইরানের আধুনিকায়নের প্রথম অগ্রনায়ক। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ইরানকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে বিদেশি প্রভাবমুক্ত করে ইরানকে তিনি একটি সমৃদ্ধশীল দেশে পরিণত করতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
যেসব ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন তার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল।
যেমন ইমাম উদ্দিন বলেন-
তার কাজটি মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের চেয়ে বেশি কঠিন ছিল, তার দেশ তুরস্কের চেয়ে বেশি পিছিয়ে ছিল এবং তিনি কাজটি পরিচালনা করার জন্য কম যোগ্য ছিলেন। [7]
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে; রেজা শাহ বহু ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।তিনি পূর্ণ সফলতা না পেলেও ইরানে তিনি যে ধারা চালু করেছেন তা ছিল ইরানের জন্য বড় পাওয়া। বিদেশি প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে এসে ইরান যে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশে পরিণত হয়েছিল তা রেজা খানেরই অবদান অবদান।
আরও পড়ুন-
No comments:
Post a Comment