আমির হাবিব উল্লাহ খান
(Amir Habibullah Khan)
(1901-1919)
আফগানিস্তানের আমির হাবিবুল্লাহ খান এর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি বা আমি হাবিবুল্লাহ খান এর কার্যাবলীসমূহ
আমির আব্দুর রহমানের মৃত্যুর পর 1921 সালে শান্তিপূর্ণভাবে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসেন তাঁর পুত্র আমির হাবিবুল্লাহ খান। 32 বছর বয়সে ক্ষমতায় এসে 50 বছর বয়স পর্যন্ত দীর্ঘ 18 বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে বিশ্ব রাজনীতি ছিল অস্থির। অ্যাংলো-রাশিয়ান কনভেনশন, বলকান যুদ্ধ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তার শাসনকালে ঘটেছিল। তিনি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা মাধ্যমে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। তিনিই প্রথম আফগানিস্থানে আধুনিকতার ভিত্তি রচনা করেন এবং আভ্যন্তরীণ ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। ক্ষমতায় এসে পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করেন। তিনি সহনশীল মনোভাবের এবং উন্নত রুচি বোধের অধিকারী ছিলেন। তিনি দেশ পরিচালনায় তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন বলে ঘোষণা দেন।
ক. আমির হাবিবুল্লাহ খান এর আভ্যন্তরীণ নীতিসমূহ
জাতীয় ঐক্য স্থাপন:
ক্ষমতা লাভের জন্য আমির হাবিব উল্লাহ খানকে যুদ্ধ করতে হয়নি। তাই ক্ষমতায় এসেই তিনি জাতীয় ঐক্য স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আমির হাবিবুল্লাহ খান তার অভিষেক অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্য অর্জনকে তার প্রধান লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু সেখানে গোত্রীয় বিরোধ ছিল এবং তার পিতা আব্দুর রহমান কিছু লোককে বহিষ্কার করেছিলেন। ফলে কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন। ক্ষমতায় এসে আমির হাবিব উল্লাহ খান বিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। বিরোধীদের ডেকে এনে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদ প্রদান করেন এবং তাদের সহযোগিতা নেন। স্বাধীন গোত্রগুলোর প্রতিও তিনি প্রভাব বিস্তারের সব পন্থা অবলম্বন করেন। গোত্রপতিদের তিনি দেশের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে স্টেট কাউন্সিল গঠন করে তাদের সেখানে পদ-পদবী দিয়ে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। এতে তাদের মনোভাবের পরিবর্তন হয় এবং জাতীয় ঐক্য ত্বরান্বিত হয়।
রাজপরিবার নিয়ন্ত্রণ:
রাজপরিবারের কিছুটা বিশৃঙ্খলা ছিল এবং কয়েকটি শক্তিশালী পরিবার ছিল যেমন-
এনায়েত উল্লাহ খান
নসরুল্লাহ খান
চারকি পরিবার ও
মোহাম্মদবেগ তারাজি
এদের দিক থেকে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। তিনি তাদেরকে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। পুত্রদেরকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন এতে রাজপরিবারে ঐক্যবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
আরও পড়ুন-
মুহাম্মদ আলী পাশা এবং আধুনিক মিসর
সংস্কার কর্মসূচি:
তিনি ব্যাপক সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং এগুলোর বাস্তবায়নে তিনি বেশ সতর্ক ছিলেন।
প্রশাসনিক সংস্কার:
তিনি পিতার আমলের প্রশাসনিক মৌলিক কাঠামো ঠিক রেখে কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন করেন। সমগ্র দেশকে 6 টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। যেমন-
কাবুল
কান্দাহার
হিরাত
ফারাহ
বাদাখশান ও
আফগান তুর্কিস্তান
প্রদেশগুলোকে আবার কতগুলো জেলাতে বিভক্ত করা হয়। প্রদেশ পালকে বলা হতো হাকিম। কাবুলে ছিল নায়েবে হাকিম। কেননা আমি নিজেই কাবুলের প্রধান ছিলেন। এরা আমিরের কাছে দায়বদ্ধ ছিল। এসব হাকিমরা সিভিল ও বিচারের দায়িত্ব পালন করতেন। তবে বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে আমিরের অনুমতি নিতে হতো।
সামরিক সংস্কার:
আমির হাবিবুল্লাহ খান সেনাবাহিনী নিয়োগ নীতিমালা উদারীকরণ করেন। পিতার প্রচলিত প্রতি ৮ জনে একজন বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদানের নীতি বাতিল করেন। সেনাবাহিনীকে নিয়মিত উন্নত করার জন্য তিনি ’মাদ্রাসায়ে হাবিবিয়া সিরাজিয়া’ নামক রয়াল মিলিটারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধ্যক্ষ ছিলেন তুর্কি কর্নেল মাহমুদ সাঈদ। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি রাশিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি থেকে উন্নত অস্ত্র আমদানি করেন। সেনাবাহিনীতে অবহেলিত হাজারা মুসলিম ও কাফেরিস্তানের লোকদের যোগদানের সুযোগ দিয়ে তাদের অসন্তুষ্টি দূর করেন। তিনি ঠিকমতো সৈন্যদের বেতন দিতেন।
শিক্ষা সংস্কার:
আমির হাবিবুল্লাহ খান নিজে শিক্ষিত ছিলেন। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর বড় অবদান ছিল। দেশে তখন 98% লোক ছিল অশিক্ষিত। তিনি মনে করতেন দেশ পরিচালনা ও জাতীয় উন্নতির জন্য পাশ্চাত্য ভাবধারা সম্পন্ন শিক্ষিত লোকের বড়ই প্রয়োজন। তাই তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। 1904 সালে হাবিবিয়া কলেজ স্থাপন করেন। এটাই ছিল প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার বিস্তারে এই কলেজের অবদান ছিল অনেক। এখানে ইংরেজি ভাষা সহ ধর্মতত্ত্ব, ভূগোল, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনা হত। ভারতীয় মুসলিম শিক্ষকদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে আফগান শিক্ষকও ছিলেন। এখানে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ছিল। প্রথমে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কারিকুলাম চালু করা হলেও পরে এংলো-টার্কিশ কারিকুলাম চালু করা হয়।
আরও পড়ুন-
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নামকরণ, অবস্থান, গুরুত্ব, প্রধান ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ
অর্থনৈতিক সংস্কার:
করসীমা বৃদ্ধি:
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা সে যুগের বাস্তবতায় ছিল অনেক বড় সংস্কার। তিনি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি করার জন্য করসীমা বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করেন। এতে নানা খাত ছিল। যেমন-
বিয়ে কর
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কর এবং
গবাদি পশুর উপর কর
এসব উৎস থেকে সংগ্রহ করে তিনি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন।
শিল্প কারখানা স্থাপন
অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম খাত ছিল শিল্প। তাই আমির হাবিবুল্লাহ খান শিল্পের উন্নতির জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কিছু কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগ তখনো আসেনি। এসব উদ্যোগের মধ্যে ছিল চামড়াজাত কারখানা স্থাপন, বস্ত্র চাহিদা পূরণে কিছু টেক্সটাইল মিল স্থাপন।
বৈদেশিক বাণিজ্য:
অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম খাত বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নতির ক্ষেত্রে তিনি নানাবিধ পদক্ষেপ নেন। মধ্য এশিয়ার বুখারার সাথে আফগানদের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ছিল। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ও রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সকল বাধা দূর করে তিনি বৈদেশিক বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করেন। ফলমূল, ডাল, তামাক, পোশম, ঘি, কার্পেট ও ঘোড়া ইত্যাদি রপ্তানি এবং সুতিবস্ত্র, চা, চিনি, লোহা, সুই, সুতা, কাগজ, ঔষধ পত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানি করা হতো।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন:
চলাচলের উন্নতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য হাবিব উল্লাহ খান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ, পুরাতন সড়ক মেরামত করেন। তিনি প্রথমবারের মতো মোটরযান আমদানি করেন এবং যৌথ উদ্যোগে মোটর ট্রান্সপোর্ট কারখানা স্থাপন করেন। ভারত সফরের পর 1906 সালে ভারতের সহযোগিতায় টেলিযোগাযোগ আইন চালু করেন। তিনি নানাবিধ গণপূর্ত কাজ করেন।
পানি সেচ:
আফগানিস্তান পর্বত এলাকা হওয়ার কারণে পানি ছিল কম এবং কৃষিতে সেচ ছিল দুরূহ। তবুও প্রয়োজনীয় সেচ এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমির হাবিবুল্লাহ খান রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জল সেচের ব্যবস্থা করেছিলেন।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু:
আমির হাবিবুল্লাহ খান দেশে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করেন। বেশ কয়েকটি পাওয়ার স্টেশন চালু করা হয়। এক্ষেত্রে তার বড় বড় অবদান হল বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি জাবালুস- সিরাজে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করেন। এটাই ছিল প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-
আমির দোস্ত মুহাম্মদ খান ।। Amir Dost Mohammad Khan
জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন:
আফগানরা আধুনিক চিকিৎসা বঞ্চিত ছিল। জনসাস্থ সংরক্ষণে তিনি পদক্ষেপ নেন। জন মিলান নামক একজন ইঞ্জিনিয়ার এর মাধ্যমে পাগমান থেকে রাজধানী কাবুলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেন। 1903 সালে প্রথম আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করেন। এতে তুর্কি ডাক্তার ও ভারতীয় নার্স নিয়োগ দেয়া হয়। পরে বৃটিশ ডাক্তার ও আমেরিকান ডেন্টিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়। নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা বিভাগ খোলা হয়। আফগানিস্থানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তনে এর অবদান ছিল সর্বাধিক।
সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম:
আমির হাবিবুল্লাহ খান এর আমলে প্রথম সংবাদপত্র ‘সিরাজ-আল-আখবার এ আফগানিস্তান’ প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি 1901 সালে প্রিন্টিং প্রেস ও আধুনিক যন্ত্রপাতি চালু করেন। আধুনিকতার প্রভাব ও আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এ পত্রিকা ও প্রেস বড় ভূমিকা পালন করে। আফগানদের মাঝে nationalism তৈরি করেছিল এই গণমাধ্যম। বিজ্ঞান, সাহিত্য ও রাজনীতি বিসয়ক আলোচনা এ পত্রিকাতে ছাপা হতো।
সামাজিক সংস্কার:
দুস্থ ও অসহায় এতিমদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। শরিয়া আইনের কড়াকড়ি আরোপ করেন। চারটির বেশি বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। তবে বাল্যবিবাহ ঠেকাতে পারেননি। তিনি দাসপ্রথার প্রচন্ড বিরোধী ছিলেন এবং এটা নিরুৎসাহিত করেন। অপরাধীদের তার বাবা যে কঠোর শাস্তি দিতেন তিনি তা রহিত করেন। অঙ্গ কর্তন ও জিহবা কর্তন নিষিদ্ধ করেন। বন্ধিদের প্রতি যাতে নির্মম আচরণ করা না হয় সেদিকে তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল। কারাবন্দীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, যাতে তারা বের হয়ে আবারো অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে। জেলখানা তখন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রচলন:
আমির হাবিবুল্লাহ খান 1908 সালে ভারত সফরে অভিভূত হন। পাশ্চাত্য জীবনধারা ও ধ্যান-ধারণা তাকে আকৃষ্ট করে। দেশে ফিরে এসে তিনি এই পাশ্চাত্য জীবনধারা চালু করার চেষ্টা করেন। মানুষকে উৎসাহিত করেন। তিনি নিজেও পাশ্চাত্য পোশাক পরিধান করতেন। সকল অফিসে আফগান পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেন। 11টি ক্লক টাওয়ার তৈরি করেন। তবে তিনি সংস্কার চাপিয়ে দেননি, জনগণের গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন।
সংস্কারের প্রভাব /ফলাফল:
তার অভ্যন্তরীণ সংস্কার সমাজ-সংস্কৃতি অর্থনীতিতে বেশ পরিবর্তন আসে। তবে তা ছিল অত্যন্ত ধীরগতিতে। রিভলিউশনারি বা বৈপ্লবিক ছিল না। তিনি মূলত সংস্কারের ভীত তৈরি করেছিলেন। তার বাবার অবস্থান থেকে তিনি কিছুটা অগ্রসর হয়েছিলেন। আমির হাবিবুল্লাহ খান দূরদর্শী ছিলেন। আফগান সমাজ কি পরিমান সংস্কার গ্রহণ করতে পারবে এবং সংস্কারের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, আলেমদের থেকে কি পরিমান প্রতিবাদ আসতে পারে সে বিষয়ে তিনি সতর্ক ছিলেন। ফলে তার সংস্কার ছিল ধীরগতিতে। বিপরীতে তার ছেলে বাদশাহ আমানুল্লাহ দ্রুত সংস্কার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গণধর্মান্তর বা দ্রুত ইসলাম বিস্তারের কারণসমূহ
খ. পররাষ্ট্র /বৈদেশিক নীতি:
তার পররাষ্ট্রনীতি ছিল ব্রিটিশ ভারত ও রাশিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট। তিনি বৃটিশ প্রভাবাধীনে ছিলেন বটে দেশের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। ব্রিটিশ দুর্বলতা থাকলেও কার্যত তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন।তখন ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড কার্জন। তার সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে1905 সালের 2 মার্চ দুই দেশের মধ্যে Treaty of Mole স্বাক্ষরিত হয়।
তবে F. Tytler বলেন-
ব্রিটিশরা আমিরকে স্বীকৃতি দিলেও মূলত এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের বৈদেশিক নীতির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল ব্রিটেন। তিনি বলেন-
P. Sykes এর মন্তব্য পরিপূর্ণ সত্য নয়। তবে এ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ আফগান সম্পর্কের উন্নতি হয়। 1906 সালের লর্ড মিন্টুর আমন্ত্রণে 1907 সালে আমির হাবিবুল্লাহ খান ভারত সফরে আসেন। এই সফরে তিনি বেশ অভিভূত হন।
অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আগে থেকেই ভাল ছিলনা। 1904 সালে আমির রাশিয়ার জারের চুক্তির প্রস্তাব নাকচ করে দেন । 1903 সালে হিরাতে রুশ ঘাঁটি ধ্বংস করেন। তবে 1905 সালে রুশ-জাপান যুদ্ধে বিপর্যস্ত রাশিয়া আফগানিস্তানে হামলা করেনি। এই এলাকাতে নতুন শক্তি জার্মানিকে ঠেকাতে 1907 সালে এংলো- রুশ কনভেনশনে আফগানিস্থানকে বৃটেনের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমির যদিও এই চুক্তি অস্বীকার করেছিলেন। তবে রাশিয়ার সাথে নতুন করে সম্পর্ক করার কোন প্রয়োজন ছিল না।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও নিরপেক্ষতা নীতি:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব অক্ষশক্তি এবং মিত্রশক্তি এ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মুসলিম দেশগুলো তুরস্কের পক্ষ নিলেও এশিয়ায় ব্রিটিশ শাসিত দেশগুলো কৌশলগত কারণে অক্ষ শক্তির পক্ষে যেতে না পারলেও তাদের সমর্থন ছিল তুরস্কের পক্ষে। জার্মানি আমিরকে তার পক্ষে চুক্তিতে চাপ দিচ্ছিল জনগণ ও তাই চেয়েছিল। তুর্কি সুলতানের ফতোয়া, জনগণের চাপ, জার্মানীর ইচ্ছা আবার এদিকে বৃটেনের ভয় ইত্যাদি কারণে আমির মহাসংকটে পড়েছিলেন। এই অবস্থায় আমির হাবিবুল্লাহ খান আফগানিস্তানের নিরপেক্ষ নীতি ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে-
আফগানিস্তান যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পায়;
তবে আমির উভয় পক্ষের অসন্তুষ্টি অর্জন করেন আর;
এ কারণেই তাকে আততায়ীর হাতে প্রাণ দিতে হয়।
কেউ বলেন অক্ষশক্তির পক্ষের লোকেরা তাকে হত্যা করেছে। আবার অনেকে বলেন একটা ব্রিটিশদের কাজ, কেননা নিরপেক্ষতা নীতিগ্রহণ করে তিনি ব্রিটিশ ভারতকে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলে ছিলেন।
আমির হাবিবুল্লাহ খান তার বাবার মতই একজন যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন, তবে তিনি তাঁর বাবার মতো ক্যারিশমাটিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন না। তবু আমরা বলতে পারি আমির হাবিবুল্লাহ খান আধুনিক আফগানিস্তানের ভীত রচনা করেছিলেন। স্বাধীন আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠায় বড় অগ্রগতি অর্জন করেছেন। তার সংস্কারসমূহ আফগানিস্তনে একটি নতুন চেতনার জন্ম দেয় এবং একটি শিক্ষিত জাতীয়তাবাদী চেতনা সম্পন্ন শ্রেণীর উদ্ভব ঘটায়।
আরও পড়ুন-
আফগানিস্থানে বৃটিশ ফরওয়ার্ড পলিসি
প্রিয় পাঠক,
যে কোন ভূল-ত্রুটির সংশোধনী বা পরামর্শ থাকলে ওয়েব সাইটে পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে লিখুন। ইসলামের ইতিহাস, স্বাধীন-বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, ইসলামের বিধি-বিধান সংক্রান্ত কোন প্রবন্ধ বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে লেখা কোন প্রবন্ধ প্রকাশ করতে চাইলে আপনার লেখা এবং পরিচিতিসহ মেইল করুন।
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS General Education
Lecturer
Department of Islamic History & Culture
Chandpur Govt. College, Chandpur.
No comments:
Post a Comment