পাকিস্তান: রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বিদ্যমান বৈষম্যসমূহ
[The existing disparity between East and West Pakistan]
পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তান মারাত্মক অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়। ফলে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। প্রাদেশিক সরকারের হাতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কোন ক্ষমতা ছিলনা। কেন্দ্র সরাসরি এসব নিয়ন্ত্রণ করত বলে পূর্ব পাকিস্তানের সমুদয় আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত। স্টেট ব্যাংক সহ প্রায় সকল ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি প্রধান এবং বিদেশী মিশনসমূহের হেড অফিস ছিল পশ্চিমে। ফলে অবাধ অর্থ পাচার সহজ হয়। পূর্বাঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের ব্যাপারটি ছিল পশ্চিমের দয়ার ওপরে নির্ভরশীল। অন্যদিকে উদ্বৃত্ত আর্থিক সঞ্চয় পশ্চিম পাকিস্তানে জমা থাকত। যে কারণে বাংলাদেশে কখনো মূলধন গড়ে উঠতে পারেনি। এই প্রক্রিয়ায় যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ছিল অর্থনৈতিক স্বশাসন বা স্বায়ত্তশাসন। পূর্ব পাকিস্তান মুদ্রা, রাজস্ব নীতিতে প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সাহায্য নীতি ছিল সময়ের দাবি। আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার না হলে অর্থনৈতিক শোষন বন্ধ বা সম্পদ পাচার বন্ধ হবে না এটি বাঙ্গালীরা উপলদ্ধি করেতে সক্ষম হয়। ফলে ষাটের দশকে এসব দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। অর্থনৈতিক মুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলন চলতে থাকে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো
পাকিস্তান একটি ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র। এটি একটি অভূতপূর্ব যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের পূর্ব এবং পশ্চিম দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় 1500 মাইল। এই দুই অংশের মধ্যে একমাত্র ধর্মীয় সাদৃশ্য ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রেই কোন প্রকার সাদৃশ্য ছিল না। পাকিস্তান জনসংখ্যার 43.7% পশ্চিম পাকিস্তানের বসবাস করত এবং 56.3% পূর্ব পাকিস্তানের বসবাস করত।
পাঁচটি প্রদেশে, পাঁচটি দেশীয় রাজ্য এবং কিছু উপজাতি এলাকা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। কিন্তু 1955 সালের মারি চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানকে দুটি ইউনিট এ বিভক্ত করা হয় যথা-
পশ্চিম পাকিস্তান এবং
পূর্ব পাকিস্তান
সরকার ব্যবস্থা
রাষ্ট্রপ্রধান গভর্নর জেনারেল
সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী
সংবিধান প্রণয়ন 1956 সালে
সাংবিধানিক নাম ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান
কেন্দ্রীয় সরকারের কাঠামা
রাষ্ট্রপতি /প্রেসিডেন্ট
প্রধানমন্ত্রী , রাষ্ট্রপতির অনুকূলে
মন্ত্রী পরিষদ
কেন্দ্রীয় আইনসভা
সুপ্রিম কোর্ট
কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কাঠামো/ কেন্দ্রীয় সচিবালয়
প্রাদেশিক সরকার
প্রাদেশিক গভর্নর
মুখ্যমন্ত্রী
প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা
প্রাদেশিক আইন সভা
প্রাদেশিক প্রশাসনিক কাঠামো / প্রাদেশিক সচিবালয়
কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার সম্পর্ক:
জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কেন্দ্রের উপর এবং অবশিষ্ট বিষয়সমূহ প্রদেশের উপর ন্যস্ত থাকবে
কোন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন এর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কেন্দ্রের আইনটি গৃহীত হবে এবং প্রদেশের আইন বাতিল হবে। তবে প্রাদেশিক আইন প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ করলে তা ঐ প্রদর্শনের জন্য বলবৎ থাকবে।
প্রাদেশিক গভর্নর তার কার্যাবলীর জন্য প্রেসিডেন্ট এর নিকট দায়ী থাকবেন।
প্রাদেশিক পরিষদ প্রাদেশিক বিষয় সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে পারবে।
প্রাদেশিক পরিষদ কর আরোপ করতে পারবে তবে তা কেন্দ্রীয় সীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া প্রাদেশিক সরকার কোন ধরনের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে পারবে না।
পাকিস্তানের ভূগর্ভস্থ অথবা সমুদ্র তলদেশের সকল খনিজ সম্পদের মালিক কেন্দ্রীয় সরকার।
আরও পড়ুন-
বাঙ্গালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি, Ethnographic identity of the Bengali nation
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বিদ্যমান বৈষম্যসমূহ: তুলনামূলক চিত্র
পাকিস্তান আন্দোলনের নেতারা দেশের পশ্চিমে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার 56% হলেও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে পশ্চিমারা। এরপরই রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে দেশের অন্য অংশের নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য শুরু হয়।গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে এবং সেনাবাহিনীতে সিনিয়র পদে বাঙালিদের নিয়োগ পাওয়া ছিল খুবই কঠিন। একই সময়ে, পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে পশ্চিমের কারখানার কাঁচামালের প্রধান সরবরাহকারী এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রধান ক্রেতা।
ক. সামাজিক বৈষম্য
সামাজিক কাঠামো
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পাকিস্তানের দুই অংশের সামাজিক কাঠামো ছিল ভিন্ন রকম। যেমন-
পশ্চিম পাকিস্তানে- শিল্পপতি, ব্যবসায়ী পুঁজিপতি ও প্রভাবশালী শ্রেণি
পূর্ব পাকিস্তানে- কৃষিভিত্তিক সমাজ
শুরুতে পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যবসায়ী শ্রেণীর তেমন না থাকলেও দেশভাগের পর পরই ভারত থেকে বড় বড় মুসলিম ব্যবসায়ীরা পশ্চিম পাকিস্তানের বসতি স্থাপন করে। বিশেষ করে গুজরাট থেকে বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী পশ্চিম পাকিস্তানী হিজরত করে এবং তারা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি শ্রেনীর বিকাশ ঘটায়।এছাড়া উচ্চপর্যায়ের আমলা ও পেশাজীবীদের অধিকাংশই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের। ফলে একটি এলিট সমাজব্যবস্থা পশ্চিম পাকিস্তানী গড়ে উঠে। পক্ষান্তরে পূর্বপাকিস্তানে কৃষি ভিত্তিক একটি দরিদ্র সমাজব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
2. বিমাতাসুলভ আচরণ:
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে পাঞ্জাব প্রদেশের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কেননা পাকিস্তানের ঐ অংশে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বসবাস করত এবং চাষযোগ্য উর্বর জমি সেখানে ছিল। এছাড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পাঞ্জাবীদের সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল। ফলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী মনে করত যে পাকিস্তান তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং তারা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদেরকে দুর্বল ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে বিবেচনা করত। পাকিস্তানের প্রশাসন ও সামরিক ক্ষমতা পশ্চিমাদের হাতে কুক্ষিগত হওয়ার কারণে সর্ব দিক দিয়েই সেখানে উন্নয়ন শুরু হলো কিন্তু পূর্ব বাংলাকে উপনিবেশ হিসেবে রাখা হলো।
3. জাতপাতের ভিন্নতা
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণও সমজাতীয় ছিল না, এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অনেক ভিন্নতা ছিল। এখানকার উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে উপজাতিদের প্রাধান্যের ফলে কোন ঐক্যবোধের সৃষ্টি হয়নি। ভাষাগত ব্যবধানের ফলে পাঠান বেলুচ, সিন্ধি, পাঞ্জাবিদের মধ্যেও ব্যাপক তারতম্য ছিল। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ততান্ত্রিক বিভাজন ছিল প্রকট। অন্যদিকে নৃতাত্ত্বিক সূত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনেকাংশেই সমজাতীয় ছিল। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল বাঙালি। অঞ্চলে কিছু উপজাতি বসবাস করলেও তাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবোধ গঠনে কোন বাধার সৃষ্টি হয়নি।
খ. ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য
পাকিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হলেও দুই অংশের মানুষের মাঝে ইসলাম ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন রকম। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সত্যিকার অর্থেই ইসলামের উদারনৈতিক ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন ছিল রক্ষণশীল। পূর্ব পাকিস্তানের উদারনৈতিক ধর্মীয় মূল্যবোধকে পশ্চিমারা অনেক সময় কটাক্ষ করতো এবং তারা অনেকে বাঙ্গালীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ পোষণ করত। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ কার্যত পূর্ববাংলার মুসলমানদেরকে স্বল্পমাত্রায় মুসলিম বা আংশিক মুসলিম মনে করত।
এক্ষেত্রে এন্থনি মাসকারেনহাস এর উক্তি উল্লেখযোগ্য-
“কুমিল্লার নবম ডিভিশন হেডকোর্য়টারে আমার সফরকালে আমি দেখেছি, পাঞ্জাবি অফিসাররা বাঙ্গালীদের ইসলামের আনুগত্যের প্রতি সবসময় সন্দেহ পোষন করত। তারা বাঙ্গালি মুসলমানদের কাফির ও হিন্দু বলতো।” ( See, এন্থনি মাসকারেনহাস, দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ, বাংলা অনুবাদ, 1990)
গ. সেবা খাতে বৈষম্য
ঘ. উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ বৈষম্য:
ঙ. শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য
১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত ২১ বছরের শিক্ষাখাতের চিত্র-
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, সীমানা ও ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ
চ. চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য
বেসামরিক উচ্চ পদে নিয়োগ
কেন্দ্রীয় সচিবালয় উচ্চপদে বাঙ্গালীদের চাকরির চিত্র , 1962
বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীর চিত্র
সামরিক বাহিনীর উচ্চপদে পূর্ব বাংলার অবস্থা
সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগে বৈষম্য
ছ. রাজনৈতিক নেতৃত্ব:
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার চিত্র:
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশের সমাজ ও জনজীবনে ভূ প্রকৃতির প্রভাব
জ.
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য
রাজনৈতিক বিবেচনায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্যই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেশি ক্রিয়াশীল ছিল।
মাথাপিছু আয়:
স্থান সৃষ্টির সময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অর্থাৎ 947 সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মাথাপিছু আয় এর পার্থক্য ছিল 25 টাকা মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে 1950 সালে এই ব্যবধান দাঁড়ায় 63 টাকায় নিচের সারণিতে পার্থক্যটি আরো স্পষ্ট হবে-
পাকিস্তানের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উপর অর্থনীতিবিদদের প্যানেলের উপর রিপোর্ট (পশ্চিম পাকিস্তানী অর্থনীতিবিদদের রিপোর্ট)
কেন্দ্রীয় সরকারের আয় ও ব্যয় এ বৈষম্য
1947-55 এর মধ্যে দেখা যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের মোট 19550 মিলিয়ন পক্ষান্তরে পূর্ব পাকিস্তানের মোট ব্যয় 2550 মিলিয়ন।
অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত বৈষম্য:
পশ্চিম পাকিস্তান দেশের জনসংখ্যা 46% জনসমষ্টি বাস করলেও জাতীয় প্রিয় সম্পদের 75% বরাদ্দ করা ওই অঞ্চল এর ফলেএকদিকে আয় বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে কর্মসংস্থা বৃদ্ধি পায় ফলে তা বেসরকারিবেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যয় এর মাধ্যমে মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তান নানা বিধ অর্থ অর্থ অর্থনৈতিক অবকাঠামো স্থাপিত হয়।ব্যাংক-বীমা ব্যাংক বীমা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা সামরিক বিমান ও নৌবাহিনী বিদেশি মিশনের প্রধান পশ্চিম পাকিস্তান এভাবে অবকাঠামোগত অর্থনৈতিক সরকারের পাশাপাশি এরমধ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা দেয়
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা
আঞ্চলিক বিনিয়োগে বৈষম্য:
পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আর মাত্র 88 শতাংশ বরাদ্দ পায় পূর্ব পাকিস্তানের 1160 কোটি টাকার মধ্যে 254 কোটি পায় পূর্ব পাকিস্তান এবং 898 কোটি পায় পশ্চিম পাকিস্তান।
শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য:
দেশ বিভক্তির পর পরই ভারতের বড় বড় মুসলিম ব্যবসায়ীরা পশ্চিম পাকিস্তানে হিজরত করে স্থায়ী হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে করাচিতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়ন করার ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ ছিল না বললেই চলে। 1961 সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র আদমজী পাটকল ছাড়া তেমন কোন বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি।
হস্ত শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা
দেশ বিভক্তির পর পূর্বপাকিস্তানে হস্তশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেননা এই শিল্পের কাঁচামাল গুলো সংগ্রহের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো ফলে তাদের অসহযোগিতার কারণে ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় যেমন-
একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প-কারখানার বিকাশ ঘটে থাকে। সর্বাগ্রে পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্প বিকাশের স্বার্থ রক্ষা করেই পূর্ব-পাকিস্তানের কথা বিবেচনা করা হতো। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিমা শিল্প পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছিল।
আমদানি-রপ্তানিতে বৈষম্য:
বহির্বাণিজ্য ছিল সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনে।এর দপ্তর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। রপ্তানি আয়ের এর 60 % যোগান দিতে পূর্ব-পাকিস্তান, কিন্তু আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের । আমদানির ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র 31.1% ।1957-57 দেখা যায় যে এ বছর রপ্তানিতে পূর্ব পাকিস্তানের অবদান ছিল 988 মিলিয়ন বিপরীতে পশ্চিম পাকিস্তানের অবদান ছিল মাত্র 434 মিলিয়ন
বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ বণ্টনের বৈষম্য:
1947-70 পর্যন্ত মোট সাহায্যের পরিমাণ ছিল 7640 মিলিয়ন এর মধ্যে মাত্র 30% পূর্ব পাকিস্তানে এবং 70% ব্যয় করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয়ের মোট পরিমাণ ছিল 2024 মিলিয়ন পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানের মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল 5616 মিলিয়ন।
ঝ. বিদ্যুৎখাতে বৈষম্য
বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন একটি দেশের শিল্প বিকাশের পরিচয় বহন করে। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলার প্রতি বৈষম্য তাই এদেশের শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
ঞ. সাংস্কৃতিক বৈষম্য
সাধারণ জাতীয় চেতনার অভাব
সাংস্কৃতিক দূরত্বের ব্যাপকতা
রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিন্নতা
জীবন যাপন পদ্ধতির ভিন্নতাঃ
ভাষাগত পার্থক্য ও দ্বন্দ্ব দ্বন্দ্ব এবং বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় বাধা
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান
[ প্রিয় পাঠক,
যে কোন ভূল-ত্রুটির সংশোধনী বা পরামর্শ থাকলে ওয়েব সাইটে পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে লিখুন। ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বাধীন-বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, ইসলামের বিধি-বিধান সংক্রান্ত কোন প্রবন্ধ বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে লেখা কোন প্রবন্ধ প্রকাশ করতে চাইলে আপনার লেখা এবং পরিচিতিসহ মেইল করুন। ]
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS General Education
Lecturer
Department of Islamic History & Culture
Chandpur Govt. College, Chandpur.
No comments:
Post a Comment