সম্রাট আওরঙ্গজেব
পরিচিতি উত্থান এবং প্রাথমিক কার্যাবলী
Aurangzeb! Introduction Emergence and Primary Functions
সম্রাট আওরঙ্গজেব (Aurangzeb) ৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট এবং সর্বশেষ যোগ্য ও শক্তিশালী শাসক ছিলেন। সম্রাট আকবরের মত তার শাসনকাল ছিল প্রায় অর্ধশতাব্দী। তিনি সম্রাট শাহজাহানের তৃতীয় পুত্র। সম্রাট হওয়ার পূর্বেও তিনি বেশ দক্ষতার সাথে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার দীর্ঘ 50 বছরের শাসনামলে মোগল সাম্রাজ্য সর্বাধিক বিস্তৃতি লাভ করে। তার দাক্ষিণাত্য নীতি সর্বাধিক আলোচিত এবং সমালোচিত বিষয় ছিল। অন্য যে কোন মোগল সম্রাটের চেয়ে তিনি বেশি ধার্মিক ছিলেন। ইসলামী ভাবধারা কে সমুন্নত রাখা, জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন এবং ফতোয়ায়ে আলমগীরী এর মাধ্যমে তিনি বেশ পরিচিত। ধর্মের প্রতি তার অগাধ আনুগত্যের কারণে ইতিহাসে তিনি জিন্দাপীর নামে আখ্যায়িত। ইতিহাসের সমালোচনায় বলা হয়েছে সম্রাট আকবর রাজনীতির জন্য ধর্মকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন আর সম্রাট আওরঙ্গজেব ধর্মের জন্য রাজনীতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এই কথাটির সম্পূর্ণ সত্য নয়।
জন্ম, পরিচিতি ও উত্থান:
১৬১৮ খ্রি. ২৪ অক্টোবর আহমেদাবাদ ও মালব সীমান্তের ধুদে (দাহোদে) নামক স্থানে আওরঙ্গজেব (Aurangzeb) জন্মগ্রহন করেন । তিনি শাহজানের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন । তার মেধা ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। তিনি আরবি- ফার্সি তুর্কি ও হিন্দি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। তবে তিনি ধর্মশাস্ত্র পাঠে বেশি উৎসাহী ছিলেনে। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি জুঝর সিংহের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেন। ১৬৩৬ সালে তিনি দাক্ষিণাত্যের সুবেদার নিযুক্ত হন। ১৬৪৫ সালে তিনি গুজরাটের সুবাদার নিযুক্ত হন। ১৬৫২ সালে তিনি আবার দাক্ষিণাত্যের সুবেদার নিযুক্ত হন এবং ১৬৫৮ পযর্ন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। ১৬৪৭ সালে সম্রাটের নির্দেশক্রমে বলখ ও বাদাখশান অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
কৈশোর সাহসিকতা :
বাল্যকাল থেকে আওরঙ্গজেব সাহসী ছিলেন। কাথিত আছে; একদিন হস্তীযুদ্ধ দর্শন কালে একটি হস্তী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আক্রমণ করে । সম্রাট শাহজাহান ও অন্য রাজকুমারও উপস্থিত ছিলেন । তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর । উন্মত্ত হাতির আক্রমনে বিচলিত না হয়ে তিনি নিজ অস্ত্রের দ্বাধা হাতিকে ভীষণ ভাবে আঘাত করেন। শুরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাতি পালয়ন করে। সকল কিশোর যুবরাজের দুঃসাহস দেখে বিস্ময়াবিভূত হন । সম্রাট শাহজাহান আনন্দের সাথে পুত্র বুকে জড়িয়ে আদর করেন ।
ক্ষমতায় আরোহন :
উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে ধর্মাটের যুদ্ধে এবং সামুগড়ের যুদ্ধে রাজকীয় বাহিনীকে পরাজিত করে আওরঙ্গজেব আগ্রা দখল করেন এবং পিতা সম্রাট শাহজাহানকে গৃহবন্ধি করে ১৬৫৮ সালের ২১ জুলাই নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। এখানে তার অনাড়ম্বও অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। অতপর দেওয়াই এর যুদ্ধে দারাশিকোকে এবং খাজওয়ার যুদ্ধে শাহ সুজাকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করার পর ১৬৫৯ সালের ৫ জুন দিল্লিতে মহাসমারোহে তার দ্বিতীয় অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়।। তিনি ‘আবুল মুজাফফর মহিউদ্দীন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর বাদশাহ গাজী’ উপাধি ধারণ করে ৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরাহন করেন।
রাজত্বকাল :
আওরঙ্গজেব এর ৫০ বছরের শাসন আমল দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় ।
প্রথম ভাগ উত্তর ভারতে অবস্থান (১৬৫৮-১৬৮১)
দ্বিতীয় ভাগ দাক্ষিণাত্যে অবস্থান (১৬৮১-১৭০৭)
আওরঙ্গজেবের প্রাথমিক কার্যাবলী:
উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বের ফলে মুঘল শাসন ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । কেন্দ্রয়ী সরকারের দুর্বলতার ফলে সামন্ত রাজারা নিজ ইচ্ছা মত শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে । ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে । জনগনের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার ফলে তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে । সম্রাজ্যের কোন কোন অংশে অনাবৃষ্টি,অতিবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখ দেয় । আওরঙ্গজেব সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েই জনসাধারণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য কয়েকটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি শৃংখলা আনয়ন, দ্রব্য মূল্য হ্রাস এবং অতিরিক্ত কর বাতিল করেন। ঐতিহাসিক কাফি খানের মতে তিনি প্রায় আশি প্রকার আইনি ও বেআইনি কর মওকুফ করেন। এছাড়া তিনি -
তিনি আকবর প্রবর্তিত ধর্মমত প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহী বাতিল করেন ।
সৌর পঞ্জিকার পরিবর্তে তিনি চন্দ্র মাসের গণনায় নতুন পঞ্জিকা চালু করেন ।
তিনি সম্রাজ্যে মদপান, জুয়াখেলা ও নওরোজ উদযাপন নিষিদ্ধ করেন ।
রাজ দরবারে সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করেন ।
রাজ দরবার থেকে সভাকবি ও স্তুতিকারদের বিতাড়ন করেন।
সম্রাটের কপালে চন্দনের রাজটিকা দেওয়ার প্রথাও তিনি নিষিদ্ধ করেন ।
সম্রাটের ঝরোকা দর্শন প্রথা বাতিল করেন।
তিনি মহররমের তাজিয়া মিছিল বন্ধ করেন ।
হিন্দুদের সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেন ।
মুদ্রায় কালিমা অংকনের রীতি বাতিল করেন।
তিনি নতুন অনেক মসজিদ নির্মাণ করেন। পুরাতন মসজিদ সংস্কার করেন ।
রাজকোষ থেকে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা দানের ব্যবস্থা করেন।
নৈতিক জীবনমান উন্নতির জন্য মুহতাসিবের তৎপড়তা জোরদার করেন।
শিক্ষার বিকাশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেন।
দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় প্রতি জেলায় রাষ্ট্রীয় শস্যগুদাম স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন-
No comments:
Post a Comment