আকবরের ধর্মনীতি: দীন-ই-ইলাহী
প্রেক্ষাপট, মূলনীতিসমূহ এবং সমালোচনা
Religious Policy of Akbar
সম্রাট আকবরের ধর্মনীতি তথা দ্বীন-ই-ইলাহী সর্বাধিক আলোচিত সমালোচিত এবং বিতর্কিত একটি অধ্যায়। দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনের মাধ্যমে আকবর নিজেকে ভারতবর্ষের সর্বাধিক উদারপন্থী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। ভারতে বসবাসরত বিভিন্ন জাতি ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষকে প্রচলিত ধর্ম ও ধর্মীয় বিভক্তির বাইরে গিয়ে একটি ধর্মের ছায়াতলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি নিজেকে সর্বভারতীয় জাতীয় শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাধিক চেষ্টা করেছেন। তবে সম্রাট আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী কারও উপরে চাপিয়ে দেননি। প্রকৃত বিচারে ধর্ম যে একটি ঐশ্বরিক বিষয় এবং মানুষ ধর্ম সৃষ্টি করতে পারে না দ্বীন-ই-ইলাহির ব্যর্থতা সেটাই প্রমাণ করে।
দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন এর প্রেক্ষাপট
পারিবারিক প্রভাব:
মধ্যযুগের একটি অনন্য ধর্মীয় উদারনৈতিক পরিবারে আকবরের জন্ম হয়েছে। আকবরের পিতা ছিলেন সুন্নী অন্যদিকে মা ছিলেন পারসিক শিয়া। পিতা-মাতার ধর্মীয় উদারতা পুত্রকে প্রভাবিত করেছিল। বিশেষকরে মা হামিদা বানুর মানসিক উৎকর্ষতা উদারতা ও পরধর্ম সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুনাবলী পুত্র আকবরকে স্বভাবতই প্রভাবিত করেছিল।
শিক্ষক ও সহচরদের প্রভাব:
অভিভাবক ও শিক্ষক হিসেবে আকবর পেয়েছিলেন বেশ কিছু অসাধারণ ব্যক্তির সংস্পর্শ। অভিভাবক ও শিক্ষক বৈরাম খান, আব্দুল লতিফ, শেখ মুবারক, বন্ধুবর আবুল ফজল এবং ফৈজি আকবরের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। এরা সবাই ছিলেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত উদার চিন্তা চেতনার অধিকারী। এসব বিরোধীদের শিক্ষা ও দর্শন আকবরের ধর্মীয় জীবনকে প্রভাবিত করেছিল।
সুফিবাদের প্রভাব:
আকবর বরাবরই সুফিবাদের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তিনি ভারতীয় ও পারসিক বেশকিছু সূফীর সংস্পর্শে আসেন। বিভিন্ন সুফী এবং পীর-দরবেশদের মাজারে তার যাতায়াত ছিল উল্লেখযোগ্য। সেলিম চিশতির দরবারে তিনি প্রায়ই গমন করতেন। সুফিবাদের আধ্যাত্বিক চিন্তা-চেতনা আকবরের ধর্মীয় জীবনকে প্রভাবিত করে।
রাজ অন্তঃপুরের প্রভাব:
সম্রাট আকবর রাজপুত নীতির আলোকে রাজপুত রমণীদের বিবাহ করেছিলেন। আকবরের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী রাজ অন্তঃপুরের রমনীদের ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা আকবর প্রভাবিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক ইচ্ছা:
আকবরের ধর্মমত প্রতিষ্ঠার পেছনে অবশ্যই তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত ছিল। আকবর শুধু মুসলিমদের সম্রাট নন তিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সর্বভারতীয় মানুষের সম্রাট হিসেবে গ্রহন যোগ্যতা অর্জনের পক্ষপাতী ছিলেন। তাছাড়া সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য হিন্দুদের সমর্থন ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। ঐতিহাসিক আর সি মজুমদারের মতে আকবরের সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তার ধর্মীয় নীতিকে প্রভাবিত করেছিল।
আকবরের অনুসন্ধিৎসা ও যুগ ধর্মের প্রভাব:
আকবর যে সময় রাজত্ব করেছিলেন সে সময়টি ছিল ধর্মীয় অনুসন্ধিৎসার যুগ। আর আকবর ছিলেন এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধি। ভারত, মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপে তখন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন চলছিল। ভারতে তখন কবির, নানক, শ্রী চৈতন্য, রামানন্দ প্রমুখ মনীষীগণ যে ভক্তি আন্দোলন শুরু করেছিলেন অনুসন্ধিত্সু ও বিচক্ষণ আকবর তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
আন্তঃধর্মীয় কোন্দল ও বিভক্তি:
ফতেহপুর সিক্রিতে আকবর ধর্মীয় বিতর্কের আয়োজন করতেন। সেখানে এক ধর্মের প্রতি অন্য ধর্মের বিষোদগার এমনকি একই ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পারিক বিবাদ, কলহ আকবরকে মর্মাহত করেছিল। এ সমস্ত আন্তঃধর্মীয় কোন্দল ও বিভক্তি আকবরকে নতুন ধর্ম প্রণয়নে উৎসাহিত করেছিল।
সম্রাট আকবরের ধর্মনীতির ক্রমবিকাশ:
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আকবরের জীবনকাল কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-
1556-1575 (এ সময় আকবর ছিলেন একজন সাধারণ মুসলিম)
1575-1582 (অনুসন্ধিৎসু আকবর ফতেপুর সিক্রিতে চিন্তা-গবেষণা শুরু করেন)
1582-1605 (দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন সেটার অনুসারী ছিলেন)
1556-1575 সাধারণ মুসলিম
আকবর 1556 সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। 1575 পর্যন্ত ধর্ম নিয়ে তার মধ্যে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায় না। এ সময়কালে আকবরকে একজন সাধারন সাচ্চা মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একজন সাধারণ মুসলিমের যে বিশ্বাস ও আক্বীদা ছিল এবং তারা যা করতেন আকবরও এ সময় সাধারণত তাই করতেন।
1575-1582 অনুসন্ধিৎসু আকবর ফতেপুর সিক্রি তে চিন্তা-গবেষণা:
1575 সালে আকবর ফতেহপুর সিক্রিতে ইবাদতখানা বা ধর্মসভা স্থাপন করেন। এ সময় থেকেই আকবরের অনুসন্ধিৎসু মনে ধর্ম সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণার সুত্রপাত হয়। ফতেহপুর সিক্রির এই ধর্মসভায় আকবর ধর্ম ও দর্শন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে সব ধর্মের ধর্মবেত্তা ও পণ্ডিতদের আলোচনার আয়োজন করতেন। আকবর নিজে উপস্থিত থেকে সেই ধর্মবেত্তাদের আলোচনা শুনতেন। এসব আলোচনা সভায় মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ অগ্নিপূজক জৈন জেসুইট প্রভৃতি ধর্মের ধর্মবেত্তাগন অংশগ্রহণ করতেন।
কিন্তু এ সমস্ত আলোচনা আকবরের অনুসন্ধিৎসু মনকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। উক্ত আলোচনা সভায় পারস্পারিক ধর্ম বিদ্বেষ হানাহানি আকবরকে বিষয়ে তুলে। কৌতুহলী মন আরো বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এবং তিনি কোনটি সত্য তা অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করেন। গবেষণা ও তর্কবিতর্কের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের সংস্পর্শে এসে আকবর ক্রমে এক স্বতন্ত্র ধর্মচিন্তায় মনোনিবেশ করেন।
সর্বময় অভ্রান্ত আদেশ (Infallibility Decree ) জারি:
আকবর সকল ধর্মের সার বক্তব্য অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনতেন। ইসলাম সম্পর্কে মাখদুম উল মুলক ও আব্দুন্নবীর মধ্যে আলোচনায় সৃষ্ট বিবাদে আকবর মর্মাহত হন এবং উভয়কে ধর্ম নেতা হিসেবে অযোগ্য ও অনুপযুক্ত মনে করেন। এ সময়ে শেখ মুবারক এবং আবুল ফজল পরামর্শ দিলেন যে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা হিসেবে সম্রাট ধর্মীয় সর্বময় নেতাও হতে পারেন। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে আকবর আলেমদের ধর্ম সংক্রান্ত বিবাদ-বিসম্বাদ মীমাংসা করার ক্ষমতা রহিত করেন। 1579 সালে আকবর Infallibility Decree বা ‘সর্বময় অভ্রান্ত আদেশ’ জারি করে আলেমদের ক্ষমতা ধ্বংস করেন এবং নিজেকে একই সাথে রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনা করার পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যেকোন সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা আকবর নিজে গ্রহণ করেন। ফতেপুর সিক্রির মসজিদের প্রধান ইমাম কে তিনি অপসারণ করে নিজেকে সে আসনে প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইমাম-ই- আদিল উপাধি গ্রহণ করেন এবংনিজ নামে ফৈজি লিখিত খুতবা পাঠ করেন।
1582-1605 দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন:
অতঃপর 1582 সালে আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী নামে একটি নতুন ধর্মমত প্রবর্তন করেন। আব্দুল কাদের বাদায়ুনি দীন-ই-ইলাহি কে তৌহিদ- ই-ইলাহী বা ঐশী একেশ্বরবাদ বলে উল্লেখ করেছেন। বারটুলির মতে সকল ধর্মের সার নিয়ে দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মমত গঠিত। ঈশ্বরী প্রসাদ এর মধ্যে দ্বীন-ই-ইলাহী একটি উদারনৈতিক সর্বেশ্বরবাদী ধর্ম। সকল ধর্মের ভালো এবং উৎকৃষ্ট দিকগুলো এতে সমন্বিত ছিল। সম্রাট প্রতি সোমবারে নির্দিষ্ট আসনে বসে যারা দীন-ই-ইলাহী ধর্মমত গ্রহণে ইচ্ছুক তাদেরকে দীক্ষা দিতেন। দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মে মতে কোন নবী বা দেবদেবীর অস্তিত্ব ছিলনা। আকবর প্রবর্তিত এই ধর্ম মতের মূল কথা ছিল সুলুহ কি কুল বা সর্বধর্ম সহিঞ্চুতা।
দ্বীন-ই-ইলাহির স্তর বিন্যাস::
আকবর প্রবর্তিত দ্বীন-ই-ইলাহী যে চারটি স্তর ছিল-
১ম স্তর: যারা সম্রাট এর জন্য শুধু তাদের সম্পত্তি উৎসর্গ করত তারা প্রথম স্তরের অনুসারী
২য় স্তর: যারা জীবন ও সম্পত্তি উৎসর্গ করতে তারা দ্বিতীয় স্তরের অনুসারী
৩য় স্তর: যারা জীবন সম্পত্তি ও সম্মান উৎসর্গ করত তারা তৃতীয় স্তরের অনুসারী
৪র্থ স্তর: যারা সম্পত্তি জীবন সম্মান ও ধর্ম উৎসর্গ করতে তারা চতুর্থ স্তরের অনুসারী।
দ্বীন-ই-ইলাহির মূলনীতিসমূহ:
দ্বীন-ই-ইলাহির কালিমা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আকবারু খলীফাতুল্লাহ’
দ্বীন-ই-ইলাহির অনুসারীরা পারস্পারিক সাক্ষাতে সালাম বিনিমযয়ে একজন বলতো ‘আল্লাহু আকবার’ অপরজন জবাবে বলতো ‘জাল্লে জালালুহু’
এই ধরনের আগুন থেকে পবিত্র মনে করে সম্মান করা হতো
অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হতো
যথাসম্ভব মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হতো
জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে হতো
এ ধর্মের অনুসারীরা ভিক্ষা গ্রহণ করতে পারত না
এই ধর্মে পারোলৌকিক কল্যাণ লাভের জন্য মৃত্যুর পূর্বেই ভোজ দিতে হতো
এ ধর্মের অনুসারীদের জন্য কসাই ধীবর ব্যাধ প্রভৃতি নিচুজাতের লোকের সাথে মেলামেশা নিষিদ্ধ ছিল।
অনুসারী ও প্রচার-প্রসার:
আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী নামক ধর্মমত প্রবর্তন করলেও তিনি জোর করে কারো উপরে এ ধর্মমত চাপিয়ে দেননি। যারা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে তাদেরকে শুধু এই ধর্মের অনুসারী হিসেবে পাওয়া গেছে । এই ধর্মমতের কোন গ্রন্থ ছিল না। তিনি তা প্রচার এর কোন ব্যবস্থা করেননি। কোন প্রচারকও নিয়োগ করেন নি। সর্বসাকুল্যে দ্বীন-ই-ইলাহির অনুসারীর সংখ্যা ছিল ১৮ জন যারা রাজপরিবার এবং আকবরের বড় বড় মন্ত্রী আমাত্য ছিলেন। হিন্দুদের মধ্যে একমাত্র রাজা বীরবল এইমতে দীক্ষা নিয়েছিলেন। আকবরের মৃত্যুর সাথে সাথেই দ্বীন-ই-ইলাহির অবসান ঘটে। এ ধর্মমতের উল্লেখযোগ্য অনুসারী হলেন-
আকবর নিজে
আবুল ফজল
শেখ মুবারক
রাজা বীরবল
মির্জা নাথান
আজিজ খোকা
যুবরাজ সেলিম প্রমুখ
অভিযোগ ও সমালোচনা:
বাদায়ুনী আকবরের এই ধর্মমতের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার মতে আকবর দ্বীন-ই-ইলাহির প্রবর্তনের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী হয়ে ওঠেন এবং বেশ কিছু অনুশাসন জারি করেন, যেমন-
মসজিদ উপাসনালয়গুলোকে ভান্ডার কক্ষে রূপান্তর করা;
আজান ও নামাজের বিলোপ সাধন;
রোযা রাখাও মক্কায় তীর্থযাত্রা নিষিদ্ধকরণ;
কোরআন ও হাদিস পাঠ নিষিদ্ধকরণ;
সম্রাটকে সেজদা দান করা;
দাড়ি রাখাকে নিরুৎসাহিত করা;
আরবি ভাষা নিষিদ্ধ করা;
সম্রাটের প্রাসাদের কুকুর ও শুকর প্রতিপালন উৎসাহিত করা;
শূকরের মাংস ভক্ষণ অনুমতি দেয়া;
মুহাম্মদ আহমদ ইত্যাদির নাম রাখতে নিরুৎসাহিত করা;
পুরুষদের সিল্ক ও স্বর্ণ পরিধানে উৎসাহিত করা প্রভৃতি।
জেসুইট বাদায়ূনীর মতের সমর্থক ছিলেন, তার মতে আকবর ইসলাম ধর্মের প্রতি শত্রুতা করেছেন।
ব্রকম্যান বলেন যে- ধর্মের প্রতি আকবরের নিজস্ব ধারণা ও মতবাদ অনুযায়ী তিনি ইসলাম ধর্ম সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেনরং এবং নতুন ধর্মমত প্রচার করেন।
মনসারেট মন্তব্য করেন যে- আকবর ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছিলেন এবং মুসলিম ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন না।
উপরিউক্ত বক্তব্য সমর্থন করে ঐতিহাসিক স্মিথ বলেন-
”আকবরের ধর্মমত তার প্রজ্ঞার নয় বরং নির্বুদ্ধিতার স্মৃতিচিহ্ন সমস্ত পরিকল্পনা ছিল হাস্যকর অহংকার এর স্বাভাবিক ফল এবং অসংযত স্বৈরাচারের বীভৎস প্রকাশ।”
আব্দুল কাদের বদায়ূনীর এসব অভিযোগ সর্বৈব সত্য নয়। আকবরের দরবারে যথাযোগ্য আসন না পেয়ে তিনি হয়তো বা আকবরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকেই এসমস্ত অভিযোগ আনয়ন করেছেন বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করে থাকেন। কারণ পদমর্যাদার দিক দিয়ে আবুল ফজলকে আকবর তাঁর ওপর স্থান দেন। দ্বিতীয়ত, তিনি গোড়াপন্থী হিসেবে প্রচলিত ধর্মমতের পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ হন।
তবে আবুল ফজলসহ অন্যান্য মুসলিম ঐতিহাসিকগন যুক্তি দ্বারা বলেছেন যে আকবর সবসময় ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন।
আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহী ব্যর্থ হয়েছিল। আকবরের মৃত্যুর সাথে সাথেই এর পরিসমাপ্তি ঘটে। স্বার্থসিদ্ধির নিমিত্তে অনেকেই গ্রহণ করলেও এটি জনপ্রিয় হয়নি। দ্বীন-ই-ইলাহী জনমনে কোন প্রকার আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। ধর্মীয় আন্তঃকোন্দল এবং ধর্মকে ঠিক মতো উপলব্ধি না করার কারণে ধর্মীয় বিরোধ দেখা দেয়। আর এসব দেখেই আকবর মর্মাহত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃত ধর্মবেত্তাদের কাছ থেকে আকবর প্রকৃত সত্যটি উদ্ধার করতে সচেষ্ট হন নি। বরং ধর্ম সম্পর্কে নিজের জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজে সত্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা করেছেন তা ধর্ম সম্পর্কে তার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
বক্সারের যুদ্ধ এবং নবাব থেকে ফকির হওয়া মীর মুহাম্মদ কাশীম আলী খান
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS General Education
Lecturer
Department of Islamic History & Culture
Chandpur Govt. College, Chandpur.
No comments:
Post a Comment