Breaking

Tuesday 17 January 2023

১৮২৪ সালের অ্যাংলো-ডাচ চুক্তি: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবচ্ছেদ

 অ্যাংলো-ডাচ চুক্তি-১৮২৪

১৮২৪ সালের ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি,

(Anglo-Dutch Treaty-1824)



দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম পর্তুগীজদের আগমন ঘটে। তারা ১৫১১ সালে মালাক্কা সালতানাতের পতন ঘটিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। পর্তুগীজদের সমুদ্র বাণিজ্যের পথ ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডাচদের আগমন ঘটে। ১৬৪১ সালে ডাচরা পর্তুগীজদের কে হটিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন ঘটে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে সুবিধা করতে পারলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডাচদের সাথে পেরে উঠতে সক্ষম হয়নি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে এংলো-ডাচ দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে।1824 সালের সম্পাদিত অ্যাংলো-ডাচ চুক্তির মাধ্যমে উভয়ের দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলে।





১৮২৪ সালের অ্যাংলো-ডাচ চুক্তি 

১৮২৪ সালের ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি,

(Anglo-Dutch Treaty-1824)



এংলো-ডাচ চুক্তি মূলত ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। এর অপর নাম লন্ডন চুক্তি। এটি ১৮২৪ সালের ১৭ ই মার্চ লন্ডনে স্বাক্ষরিত হয়।এই চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এবং এ চুক্তির মাধ্যমে মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।  এর উত্তরে থাকে বৃটিশদের প্রাধান্য আর দক্ষিণে ডাচদের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়। 


আরও পড়ুন-  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস রচনার উৎসসমূহ



অ্যাংলো-ডাচ (ইঙ্গ-ওলন্দাজ) চুক্তির প্রেক্ষাপট 

Background of the Anglo-Dutch Treaty



দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মূলত  মসলা বাণিজ্য নিয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। ব্রিটেন ও হল্যান্ডের মধ্যে প্রায় শত বছরব্যাপী এই প্রতিযোগিতা চলে আসছিল। ১৮১৯ সালে স্যার স্টামফর্ড রেফেলস সিঙ্গাপুর প্রতিষ্ঠা করলে ডাচদের অস্থিরতা বেড়ে যায়। জোহরের সুলতান এবং রেফেলসের মধ্যে সিংগাপুর প্রতিষ্ঠার যে চুক্তি হয়েছে সেই জোহর মূলত ডাচদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছিল, এমনকি যোহরের সুলতানও ডাচদের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। সিঙ্গাপুর বন্দরের মাধ্যমে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে এখানে ডাচ বাণিজ্য ও সম্পত্তি হুমকির সম্মুখীন হয়। আবার এসব এলাকা এবং  দূরপ্রাচ্য অঞ্চলে বৃটেনের বাণিজ্য স্বার্থ ছিল।


ডাচরা সিঙ্গাপুর থেকে ব্রিটিশদের বিলুপ্তী দাবি করে। এ অবস্থায় বাটাভিয়া এবং কলকাতার প্রতিনিধিরা ১৮২০ সাল থেকে আলোচনা শুরু করে। মূলত এ চুক্তির মাধ্যমে নেপোলিয়ন যুগে বৃটেন ডাচদের যে সকল উপনিবেশ দখল করেছিল সেসব সমস্যা, ভারতে ডাচদের বাণিজ্যের সুযোগ এবং এসব এলাকায় ডাচদের অধিকারের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। 


ডাচরা বুঝতে পারে যে, সিঙ্গাপুরের উত্থান অপ্রতিরোধ্য। তাই তারা মালাক্কার দক্ষিণে ডাচ আধিপত্য এবং উত্তরে ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের মত প্রকাশ করে। এরকম মতামতের ভিত্তিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি অংশে দুটি ইউরোপীয় শক্তির আধিপত্য বিস্তারের জন্য সামঝোতার ভিত্তিতে ১৮২৪ সালের ২৩ শে মার্চ লন্ডনে এ্যাংলো- ডাচ  চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।



১৮২৪ সালের অ্যাংলো ডাচ চুক্তির শর্ত সমূহ

  1. চুক্তিতে বলা হয় যে, দুটি জাতি অবশ্যই স্থানীয় আইন কানুন মেনে ব্রিটিশ ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে;

  2. প্রাচ্যের কোন দেশের সাথে তারা এমন কোন চুক্তি করবে না যা পারস্পরিক ব্যবসার ক্ষতি করে ব্যবসায় ক্ষতি হয় এমন কোন সামরিক বা বেসামরিক পদক্ষেপ তারা নিবে না; 

  3. দস্যুতা প্রতিরোধ, দস্যুদের আশ্রয় না দেয়া এবং চোরাই মাল বিক্রি না করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়।

  4. মালাক্কাতে ব্রিটিশদের বাণিজ্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় হবে;

  5. ভারতে ডাচদের যত স্থাপনা আছে সবকিছুর দায় দায়িত্ব তারা বৃটেনের কাছে ছেড়ে দিবে; 

  6. ব্রিটেন বেনকুলিনসহ সুমাত্রায় তাদের সকল স্থাপনা ডাচদের কাছে ছেড়ে দিবে এবং স্থানীয় কোন শাসকের সাথে কোন চুক্তি করতে পারবে না; 

  7. ডাচরা মালাক্কা বন্দর এবং সামরিক স্থাপনাসহ সবকিছু বৃটেনের কাছে হস্তান্তর করবে  এবং স্থানীয় কোন শাসকের সাথে কোন চুক্তি করতে পারবে না; 

  8. ডাচ অধিকৃত বিলিটন দ্বীপের উপর থেকে ব্রিটেন তাদের বিরোধিতা প্রত্যাহার করে নিবে; 

  9. অন্যদিকে ব্রিটেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সিঙ্গাপুরের উপর থেকে ডাচরা তাদের সমস্ত দাবি প্রত্যাহার করে নিবে;

  10. সিঙ্গাপুরের দক্ষিণের কোন দ্বীপে বৃটেন কোন অফিস খুলতে পারবেনা এবং স্থানীয় কোন শাসকের সাথে  কোন প্রকার চুক্তি করতে পারবেনা;

  11. ১৮২৫ সালের 1 মার্চে চুক্তির সবকিছু কার্যকর হবে; 

  12. জাভা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮১৭ সালের জাভা কনভেনশন বলব থাকবে; 

  13. ডাচারা এজন্য ব্রিটেনকে 1825 সালের এর মধ্যে 10000 পাউন্ড দেবে।







১৮২৪ সালের অ্যাংলো-ডাচ চুক্তির গুরুত্ব মূল্যায়ন

  1. এই চুক্তি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। উত্তরে বৃটেন নিয়ন্ত্রিত সিঙ্গাপুর এবং মালয় অঞ্চল আর দক্ষিণে  নেদারল্যান্ড নিয়ন্ত্রিত ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ;

  2. এই চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী ফল হিসেবে উত্তরের ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চল থেকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটে অন্যদিকে দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটে;

  3. এই চুক্তিটি সরাসরি ব্রিটেন এবং ডাচদের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে, মালের শাসক বা মন্ত্রীদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা বা মতামত নেয়া হয়নি;

  4. এই চুক্তির মাধ্যমে বিবদমান এই দুটি জাতির রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক দন্দের অবসান ঘটে এবং তারা দুই দিকে দুই এলাকায় শাসন ও নিয়ন্ত্রণে আত্মনিয়োগ করে।  


আরো পড়ুন-


আরো পড়ুন-





Md. Billal Hossain

B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka

BCS (General Education)

Lecturer

Department of Islamic History Culture











No comments:

Post a Comment