দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পর্তুগিজদের আগমনঃ
তাদের বাণিজ্য নীতি ও গতি-প্রকৃতি
(Arrival of the Portuguese in Southeast Asia)
রেনেসা প্রসূত ইউরোপীয় জাতি-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভৌগলিক আবিষ্কারের যুগে সমুদ্রপথ ও সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যারা সর্বাধিক পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিল তারা হলো পর্তুগিজ। ক্রুসেডের ঘটনাবলী, ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের পতন এবং ভূমধ্যসাগরের মুসলিমদের হাতে মার খাওয়া ইউরোপীয়রা অস্তিত্ব রক্ষার্থে নতুন বাণিজ্য পথ খুঁজতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতের কালিকটে আসেন। ১৪১০ সালে ভারতের গোয়ায় বাণিজ্য কিুঠি স্থাপন এবং ১৫১১ সালে তারা মালাক্কা দখলের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক বিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এখান থেকেই শুরু হয় প্রাচ্যে পর্তুগিজদের অগ্রযাত্রা।
পর্তুগাল ও পর্তুগিজ
আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ইউরোপের আযইভেরিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি দেশ হল পর্তুগাল। সপ্তম শতকে এই দেশকে Portucale বলা হত । ১০৯৭ সালে এর নাম হয় পর্তুগাল। পর্তুগালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলফানসো। দ্বাদশ শতাব্দীতে এটা পোপের স্বীকৃতি পায়। সমুদ্র তীরবর্তী বলে এরা সমুদ্রবিদ্যায় পারদর্শী, সাহসী ও পরিশ্রমী ছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পর্তুগিজদের আগমনের প্রেক্ষাপট:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পর্তুগিজদের আগমনের উদ্দেশ্য নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। ড. স্যার দেশাই এর মতে পর্তুগিজদের সাম্রাজ্য বিস্তার ধর্ম, অর্থ এবং গৌরব দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
ধর্মীয় উদ্দেশ্য বা ধর্মীয় প্রেক্ষাপট
ক্রুসেড এর ঘটনা এবং 1453 সালে কন্সটান্টিনোপলের পতন খ্রিস্টানদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করে। ১৪৫৪ সালে পোপ খ্রিস্টানদেরকে প্রাচ্যে আসার আদেশ দেন এবং ইসলাম রোধ করে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের ধর্মানুজ্ঞা দান করেন৷ ১৪৯৪ সালে পর্তুগিজদের প্রাচ্যে এবং স্পেনীয়দের পশ্চিমে ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়। সুতরাং ক্যাথলিক ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা ছিল পর্তুগীজদের অন্যতম লক্ষ।
বাণিজ্যিক কারণ
পর্তুগিজরাই ইতোমধ্যে নৌ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে সমুদ্র বাণিজ্যে অগ্রনী ভূমিকা রাখতেছিল। কিন্তু ১৪৫৩ সালের পর ভূমধ্যসাগরে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপীয়দের এশীয় বাণিজ্যিক রুট প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সকল প্রকার বাণিজ্যের হুমকির মুখে পড়ে। সেজন্য তারা বিকল্প পথে বাণিজ্য যোগাযোগের জন্য প্রাচ্যে আসার ব্যাপারে আগ্রহী হয়।
দাস সরবরাহ:
বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্তুগিজরা দাস ব্যবসা করত। ইউরোপ এবং আমেরিকায় চাষাবাদের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। বিপুল পরিমাণ শ্রম শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য দাস সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে তারা দক্ষিণ পূর্বে এশিয়ায় আগমন করেছে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।
মসলা বাণিজ্য:
পর্তুগিজদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আসার মূল কারণ ছিল মসলা বাণিজ্য। খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি, মাছ-মাংস দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা এবং প্লেগ রোগের ঔষধ হিসেবে ইউরোপজুড়ে মসলার ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর এবং পারস্য উপসাগর দিয়ে স্থলভাগের বাণিজ্যিক রুট মুসলমানদের দখলে চলে যাওয়ার কারণে লিসবন বন্দরে মশলা বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম হয়। তাই মসলা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য তারা বিকল্প পথে প্রাচ্যে আগমন করে।
অন্যান্য কারণ
পর্তুগিজদের প্রাচ্যে আসা তথা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো হলো-
পর্তুগালের আর্থ-রাজনৈতিক উন্নতি
ব্যবসা-বাণিজ্য ও সমুদ্র পথ আবিষ্কারের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা দান
রাজপুত্রদের অবদান
নিজস্ব ভাষার উন্নতি ও স্বাধীনতা
সমুদ্রবিদ্যা পারদর্শিত অর্জন এবং
বাণিজ্যিক উন্নতি সাধন
পর্তুগিজদের প্রাচ্যে আগমন
নতুন আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় বিখ্যাত পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা ১৪৯৭ সালে লিসবন থেকে যাত্রা করে আরব বণিক আহমদ ইবনে মাজীদ এর সহায়তায় উত্তমাশা অন্তরীপের পথ ধরে ১৪৯৮ সালে ভারতের কালিকট এসে উপস্থিত হন। ধর্মীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের তেমন পরিবেশ না থাকায় ভাস্কো দা গামা এক জাহাজ মসলা নিয়ে দেশে ফিরে যান। সম্রাট তার প্রশংসা করেন এবং যেকোনো মূল্যে এই বাণিজ্য পথ গোপন রাখার নির্দেশ দেন। যাতে করে ইউরোপীয় অন্য কোন দেশ এই বাণিজ্য পথের সন্ধান না পায়।
গভর্নর নিয়োগ
পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম ১৫০০ সালে কোচিনে তাদের বানীজ্য কুঠি নির্মাণ করে। প্রাচ্য বাণিজ্য পরিচালনার জন্য রাজা মেনুয়েল দুজন গভর্নর জেনারেল নিয়োগ দেন পর্যায়ক্রমে এরা হলেন-
F. de Almeida (আল মেইডা) এবং
Don Alfonso de Albuquerque (আল বুকার্ক)
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে ডি আলমেইডা এবং আল বুকার্কের নীতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাণিজ্য সম্প্রসারণে আলমেইডার পদক্ষেপ:
এফ ডি আল মেইডা রাজা মেনুয়াল কর্তৃক নিযুক্ত প্রাচ্য বনিজ্যের প্রথম ভাইসরয় বা গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আলমেইডা প্রথমেই প্রাচ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং এই এলাকায় পর্তুগিজ বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা নির্ধারনের চেষ্টা করেন। তিনি কোচিনে তার কুঠি স্থাপন করেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, এই এলাকার সমুদ্র ও সমুদ্র বন্দরগুলিতে মুসলিম আধিপত্য তাদের বাণিজ্যের প্রধান অন্তরায়। তাই তিনি মনে করলেন লোহিত সাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং পারস্য উপসাগরে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম আধিপত্য ধ্বংস করতে পারলেই পর্তুজ বাণিজ্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
কিন্তু সামরিক শক্তি-সামর্থ্যের অপ্রতুলতার কারণে তিনি রণনীতি পরিত্যাগ করে সহঅবস্থানমূলক বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ছিল হরমুজ প্রণালী নিয়ন্ত্রণে রাখা, আরব সাগরে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং মালাবার উপকূলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং মসলা ও মরিচ ইউরোপে প্রেরণ করা।
বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য তিনি বন্দর থেকে বন্দরে বায়িং এন্ড সেলিং নীতি গ্রহণ করেন। তার চিন্তা ছিল সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিগত, উপনিবেশিক নয়। তার এই অতি সতর্কতামূলক নীতির কারণে ১৫০৯ সালে তার সহযোগী আল বুকার্কের সাথে তার বিরোধ বাধে। তিনি বুকার্ককে বন্দী করেন। এই অবস্থায় রাজা তাকে দেশে ফিরিয়ে নেন কিন্তু পথিমধ্যে তার মৃত্যু ঘটে।
পর্তুগিজ বাণিজ্য সম্প্রসারণে আল-বুকার্কের পদক্ষেপ:
১৫০৯ সালে আলবুকার্ক গভর্নর হলে প্রাচ্যে পর্তুগিজ বাণিজ্যে নতুনত্ব আসে। তিনি পর্তুগিজ বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম আধিপত্য ধ্বংসের নীতি এবং মুসলিম বণিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অমুসলিমদের সহযোগিতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
গোয়া দখল:
১৫১০ সালে আল বুকার্ক বিজাপুরের শাসনকর্তা আদিল শাহ এর শাসনব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার সুযোগে ভারতের বিখ্যাত বন্দর গোয়া দখল করে নেন৷ ১৫১০ সালে আদিল শাহ তা পুনরুদ্ধার করলেও নভেম্বরে তা আবারও আলবুকার্ক দখল করে নেন।
মালাক্কা দখল:
পোপের ধর্মাদেশ মোতাবেক মালাক্কাতে মুসলিম বাণিজ্য কর্তৃত্ব ধ্বংস এবং মালাকার নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য আল বুকার্ক মালাক্কা দখলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৫০৯ সালে আল বুকার্ক ছয়টি জাহাজসহ ডিয়াগো লোপেজ ডি সিকুইরাকে প্রেরণ করেন এই অভিযান ব্যর্থ হয়। এটা ছিল একটা অজুহাত সৃষ্টি করা।
অতঃপর আল বুকার ১৫১১ সালে এপ্রিল মাসে 18 টি জাহাজ ও ১৪০০ সৈন্য নিয়ে মালাক্কা অভিযানে বের হন। এদের অধিকাংশ ছিল গুজরাটি। জুনের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মালাক্কাতে ঢুকে পড়েন এবং অবরোধ করে রাখেন৷ তিনি শর্ত দেন যে,
পর্তুগিজ বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে
লুট করা সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে এবং
বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি দিতে হবে
কিন্তু সুলতানের পক্ষে এসব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। অবশেষে আল বুকার্ক তার সেনাবাহিনী নিয়ে মালাক্কা আক্রমণ শুরু করেন। মুসলিম অমুসলিম বণিকদের মধ্যে কৌশলে বিভেদ সৃষ্টি করেন। কাঠের সেতু ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে। অমুসলিম ও বিদেশী বনিকরা তাদের সাথে যোগদান করে। তাদের চূড়ান্ত আক্রমণে ২৪ শে আগস্ট ১৫১১ সালে মালাক্কার পতন ঘটে। সুলতান মাহমুদ শাহ পলায়ন করে পাহান চলে যান। এভাবে মালাক্কাতে পর্তুগিজদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পর্তুগিজদের বাণিজ্য নীতি:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় পর্তুগিজরা বেশকিছু নীতি গ্রহণ করে। যেমন-
এখানে মুসলিম নিধন করা হয়, মুসলিম বণিকদের বিতারিত করা হয়।
তাই স্বাভাবিক বাণিজ্য ফিরিয়ে আনার জন্য তারা নন-মুসলিম বণিকদের আশ্বস্ত করে এবং সুবিধা দেয়।
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো দখলের জন্য যুদ্ধ করে এবং ১৫২৬ সালে তারা মালাক্কার চারপাশে পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
মালাক্কা প্রণালী দিয়ে আগত সকল জাহাজকে তারা নোঙ্গর করতে বাধ্য করত। তাদের দেয়া ছাড়পত্র ব্যতীত কেউ এই প্রণালী অতিক্রম করতে পারত না।
পরবর্তীতে তারা বল প্রয়োগ নীতি পরিহার করে 6%-১০% শুল্কে জাহাজ ভেড়াতে উৎসাহিত করে।
মুসলিম বণিকদের জাহাজগুলো লুণ্ঠন করে তারা রাজস্ব বাড়াতো। দুর্বল রাজ্যগুলোকে তারা জোরপূর্ব কর দানে বাধ্য করে।
বাণিজ্যিক প্রসারতার জন্য তারা বহু স্থানে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে কোচিংয়ে তাদের প্রথম কঠিন প্রতিষ্ঠিত হয়
বাণিজ্যিক নিরাপত্তা ও সাম্রাজ্য নিরাপত্তার জন্য তারা বহু স্থানে দুর্গ নির্মাণ করে।
তাদের নিয়ন্ত্রিত সমুদ্রসীমায় তারা অন্যদের প্রবেশ করতে দিত না। তাদের সমুদ্রসীমায় অন্য বেসরকারি বণিকদের নিকট থেকে তারা নিরাপত্তা কর আদায় করত।
গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো তারা ইজার দেয়া শুরু করে।
বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমনের জন্য তারা বহু দমনকারী কর্মচারী নিয়োগ দেয়
বাণিজ্য স্থায়িত্বের জন্য তারা স্থানীয় রমনীদের বিবাহ করে
পর্তুগিজদের মসলা বাণিজ্য নীতি
মসলা উৎপাদনকারী দ্বীপগুলো তারা সামরিক শক্তি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করত। স্থানীয়দেরকে তারা শুধুমাত্র তাদের কাছেই মশলা বিক্রি করতে বাধ্য করত। মসলা বাণিজ্যে কোন মধ্যস্বত্বভোগী তারা তৈরি হতে দিত না। তারা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করত। বছরে মাত্র ২০টি জাহাজে ইউরোপে মসলা প্রেরণ করা হতো। যাতে করে ইউরোপে মসলার চাহিদা ঠিক থাকে।
১৫৩৩ সালের পর্তুগিজরা ব্যক্তিগত বাণিজ্য জড়িয়ে পড়ে। পর্তুগিজ বাণিজ্য নীতি ও দুর্বল দিক হচ্ছে তারা পুরোপুরি মুসলিম আধিপত্য ধ্বংস করতে পারেনি। পাচেই ও আচেহ এর বনিকরা জেদ্দা ও এডেনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে মসলা পাঠাতো৷ মালাকার কর্তৃত্ব মুসলিমরা হারালেও আচেহ বিকল্প মুসলিম বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
পর্তুগিজদের পতন:
প্রায় ১৩০ বছর ধরে পর্তুগিজরা পশ্চিমে হরমুজ প্রণালী পূর্বে মালাক্কা পর্যন্ত এক বিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য, উগ্র আচরন, কর্মচারীদের দুর্নীতি, কোন কোন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে অযোগ্য শাসক নিয়োগ, ভয় ভীতি দেখিয়ে শাসন করা, লুটতরাজ করা, দস্যুবৃত্তি করা, দাস হিসেবে মানুষকে পাচার করা ইত্যাদি কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতের মানুষ পর্তুগিদের প্রতি বিরক্ত ছিল৷
পর্তুগিজরা ছিল গোড়া ক্যাথলিক৷। তাদের ধর্মান্ধতাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতে তাদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায়। মালাক্কা দখলের পর পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু রাজ্যের সাথে পর্তুগিজরা সংঘর্ষে জড়ায়। বিশেষ করে আচেহ যোহর এবং জাভার সাথে তাদের সংঘর্ষ তৈরি হয় এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের সামরিক শক্তির ব্যয় হয় যা সামরিক দিক থেকে তাদেরকে দুর্বল করে দেয়।
ইতিমধ্যে মুসলিমরা পর্তুগিজদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বি বাণিজ্যিক শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে। অন্যদিকে ইউরোপ থেকে নতুন ভাবে আগমন করে ডাচ এবং ব্রিটিশরা। ফলে দক্ষিণ পূর্বে এশিয়ায় পর্তুগিজ বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডাসরা শক্তিশালী বাণিজ্যিক অবস্থান তৈরি করে। অতঃপর পর্তুগিজ-ওলন্দাজ বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
এদিকে ১৫৮০ সাল থেকে ১৬৪০ পর্যন্ত পর্তুগাল স্পেনীয় শাসনাধীনে থাকার কারণে তাদের নৌশক্তির মারাত্মক অবনতি ঘটে। দুর্বল নৌশক্তি দিয়ে ওলন্দাজ এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৬৪১ সালে ডাচদের হাতে পর্তুগিজদের পতন ঘটে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ডাচদের বাণিজ্যিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পর্তুগিজদের পতন ঘটে৷
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS General Education
Lecturer
Department of Islamic History & Culture
Chandpur Govt. College, Chandpur.
No comments:
Post a Comment