কালচার সিস্টেম
পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে ওলন্দাজ (ডাচ) সরকার প্রণীত
কালচার সিস্টেম
(Cultivation system)
জাভাকে একটি লাভজনক উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ডাচ সরকার যে সকল নীতি গ্রহণ করেছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কালচার সিস্টেম বা Cultivation system। বেশ কতগুলো নীতি ব্যর্থ হওয়ার পর ১৮৩০ সালে ডাচ সরকার ভ্যানডেন বচ এর মাধ্যমে এই নীতি চালু করে। কালচার সিস্টেম বা কৃষি নীতির মাধ্যমে ডাচ সরকার আশাতীত সাফল্য অর্জন করে। এই ব্যবস্থায় অর্জিত অর্থ দিয়ে দেউলিয়া হল্যান্ড মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সকল ঋণ পরিশোধ করে ইউরোপের একটি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তারা শিল্প বিপ্লব ঘটায় এবং বিশ্ব বাণিজ্য ও জাহাজ শিল্পে অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু এর বিপরীতে জাভাবাসী চরম দুর্দশায় নিপতিত হয়। অত্যাচার, নিপীড়ন আর শোষনের ফলে তারা আধা দাসত্যে পরিণত হয়। তারা বেগার শ্রম দিতে বাধ্য হয়। ক্ষুদা ও দারিদ্র্যতা তাদেরকে গ্রাস করে
কালচার সিস্টেম বা Cultivation system এর পরিচিতি:
এই নীতির জন্য ব্যবহৃত মূল শব্দ হলো Cultuurstelsel। Clive Day, জে এস ফার্নিভাল এটাকে কালচার সিস্টেম বলে অভিহিত করেছেন আর Kahin একে বলেছেন Cultivation system (কাল্টিভেশন সিস্টেম)। স্থানীয় ভাষায় এই সিস্টেমকে বলা হয় তানাম পাকশা (Tanam Paksa)। যার মূল অর্থ হলো সরকার নিয়ন্ত্রিত কৃষি নীতি বা বাধ্যতামূলক কৃষি পদ্ধতি। ডাচ সরকার ১৮৩০ সালে জোহান্স ব্যান্ডেন বচ এর মাধ্যমে যে শাসনীতি চালু করে সেটাই কালসার সিস্টেম।
According to encyclopedia Britannica
Culture system,revenue system in the Dutch East Indies (Indonesia) that forced farmers to pay revenue to the treasury of the Netherlands in the form of export Corps or compulsory labor (15th edition, London Volume 3, P. 785)
The cultivation system was a Dutch government policy in the mid-nineteenth century for its Dutch East Indies Colony (Now Indonesia)
আরও পড়ুন-
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস রচনার উৎসসমূহ
কালচার নীতি প্রবর্তনের কারণ প্রেক্ষাপট
১৭৯৯ সালে VOC এর পতনের পর পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে সরাসরি ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১১ সালে রেফেলস জাভা দখল করলে ১৮১৬ সালে ব্রিটিশরা তা ছেড়ে দেয়। ১৭৯৯ সাল থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত এখানে ভূমি প্রশাসনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সিস্টেম চালু করা হয়। যেমন-
Contingencies
Forced Delivery System
Contract system
খাজনা পদ্ধতি ইত্যাদি
কিন্তু কোন পদ্ধতি সরকারের জন্য লাভজনক হয়নি। ১৮১৯ সালে ভেন্ডার Capellen কে গভর্নর জেনারেল করে পাঠানো। হয় তিনি এখানে কন্ট্রাক্ট পদ্ধতি চালু করেন কিন্তু তাতে অবস্থার উন্নতি হয়নি। সরকার ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। দ্বীপপুঞ্জের আসন্ন অর্থনৈতিক পতন ঠেকাতে Capellen জাভার রাজস্ব বন্ধক রেখে কলকাতার পামার এন্ড কোম্পানি থেকে ২০ মিলিয়ন গিলডার ঋণ গ্রহণ করেন।
এদিকে স্বয়ং রাজা উইলিয়ামের অংশীদারীতে ৩৭ মিলিয়ন গিল্ডার মূলধনের ‘নেদারল্যান্ডস ট্রেনিং সোসাইটি’ গঠন করলেও আর্থিক বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি। ১৮২৫ সালে জাভা যুদ্ধ শুরু হলে অবস্থা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে Capellen বরখাস্ত হন।
১৮২৫ সালেই Leonard du Bus de Gisignies কে গভর্নর জেনারেল করে পাঠানো হয়। এ সময় 1825 থেকে 1830 সাল ব্যাপী জাভা যুদ্ধ মোকাবেলায় সরকারের ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ক্ষতি সাধিত হয়। তিনি এ প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস করা সহ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু এর সুফল লাভের পূর্বে ১৮৩০ সালে বেলজিয়াম হল্যান্ড থেকে আলাদা হয়ে গেলে জাতীয় অর্থনীতি পুনর্গঠনের উদ্যোগ ভেস্তে যায় এবং হল্যান্ড দেউলিয়া হওয়ার দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়।
স্বদেশে ও উপনিবেশে উপরিউক্ত নাজুক অবস্থার প্রেক্ষিতে ডাচ সরকার জাভায় বাস্তব অবস্থার মূল্যায়ন ও সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের উদ্দেশ্যে Ven Den Bosch কে1829 সালে দ্বীপপুঞ্জে প্রেরণ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে দাস শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ এবং আফ্রিকার ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত Ven Den Bosch এক বছর পর একটি প্রতিবেদন রিপোর্ট দেন এতে তিনি বার্ষিক ২০ মিলিয়ন গিল্ডার আয় করার নিশ্চয়তা প্রদান করেন।
তার এই প্রস্তাব মনঃপুত হলে হল্যান্ডের সম্রাট ১৮৩০ সালে ভেন্ডেন বচকে গভর্নর জেনারেল করে পাঠান। ভ্যানডেন বচ জাভায় এসে তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী যে নতুন নীতি প্রবর্তন করেন সেটাই কালচার সিস্টেম নামে পরিচিত।
কালচার সিস্টেমের মূলকথা হলো-
উপনিবেশের কৃষকরা সরকারের নির্দেশমতো ইউরোপের বাজারের চাহিদা মোতাবেক বাধ্যতামূলক ভাবে নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদন করবে এবং তাদের উপর ধার্যকৃত ভূমিরাজস্ব ও করের পরিবর্তে উৎপাদিত পণ্য বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের কাছে সরবরাহ করবে।
আরো পড়ুন-
প্রাক - মুসলিম মালয় জগতের উপর ভারতীয় ও চৈনিক প্রভাব: স্বরূপ ও তাৎপর্য
কালচার সিস্টেমের বৈশিষ্ট্যসমূহ/ নীতিমালা
নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কতগুলো নীতিমালা প্রমাণ করা হয় ডিজিই হল ৯ টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন
ইউরোপের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কৃষি পণ্য উৎপাদনের জন্য জাভার আবাদী জমির একটি অংশ নির্ধারণ করে রাখা হবে।
নির্ধারিত জমির পরিমাণ প্রতিটি (Desa) অঞ্চলের পাঁচ ভাগের একাংশের বেশি হবে না;
নির্ধারিত এই ভূমি হবে কর করমুক্ত (তবে পাঁচ ভাগের এক অংশ নাকি সমগ্র অঞ্চল (দেশা) করমুক্ত হবে তা তা বলা হয়নি)
সরকারি পণ্য উৎপাদনে ব্যয়িত শ্রম ধান চাষের জন্য ব্যায়িত শ্রম অপেক্ষা বেশি হবে না;
পণ্য জেলাতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কৃষকের, প্রেরিত ফসলের মূল্য যদি পুরনো ধার্যকৃত ভূমি খাজনার বেশি হয়ে থাকে তবে বাড়তি মূল্য গ্রাম সমাজকে ফেরত দেয়া হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে সর্তকতা, তৎপরতা এবং শ্রমের অভাব হেতু ফসল বিনষ্ট হলে তার জন্য কৃষক দায়ী থাকবে না, সরকার দায়ী থাকবে;
দেশীয় শ্রমিকরা তাদের সমাজপতিদের নির্দেশে কাজ করবে।ফসল কাটা, ফসল তোলা, সময়মতো পরিবহনের আয়োজন করা এবং ভালো জায়গা বেছে নেয়া এসব দায়িত্ব থাকবে ইউরোপীয় কর্মচারীদের উপর;
শ্রমিকদের একদলের কাজ হবে ফসল পাকা পর্যন্ত পরিচর্যা করা, একদলের শস্য তোলা, একদলের পরিবহন ও এক দলের কারখানায় কাজ করা;
বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দিলে কৃষকদের ভূমিকর না দেয়ার স্বাধীনতা থাকবে। তখন ধরে নেওয়া হবে যে ফসল পাকলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়েছে। ফসল তোলা বা আনুষঙ্গিক কাজের জন্য আলাদা চুক্তির দরকার হবে।
পণ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া:
পদ্ধতিটি চালুর প্রথম পর্যায়ে ১৮৩১ সালে শুধুমাত্র জাভায়-
আখ,
কফি ও ,
নীল চাষ চালু করা হয়
ব্যবস্থাটি সরকারের জন্য সাফল্যমন্ডিত হলে পরবর্তীতে-
চা,
তামাক,
মরিচ,
দারুচিনি,
সিনকোনা,
কাসাভা,
কাচা নীল
ইত্যাদি বহু অর্থকরী ফসলকে কালচার ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়। 1832 সালে প্রতি রেসিডেন্সিতে জনপ্রতি দুই গিল্ডার পন্য সরকারকে সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক করা হয়।
প্রশাসনিক কাঠামো:
ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রশাসন সাজানো হয়। গভর্নর জেনারেল ছিলেন প্রধান দায়িত্বে। প্রশাসনিক বিন্যাসটি ছিল নিম্নরূপ-
গভর্নর জেনারেল
⤋
রেসিডেন্ট
⤋
সহকারী রেসিডেন্ট
⤋
রিজেন্ট
⤋
কন্ট্রোলার
⤋
সহকারী রিজেন্ট
⤋
সান্ত্রী শ্রেণী/গ্রাম প্রধান
ব্যবস্থাটি তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাদের মাধ্যমেই এই নীতি কার্যকর করা হয়। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের একটি অংশ কমিশন পেত। তাই অধিক কমিশনের লোভে তারা যে কোনোভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করত। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে পাঁচ ভাগের এক অংশের বেশি জমিতে সরকারি ফসল চাষে বাধ্য করতো। পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবাধ্য গ্রাম প্রধান ও কৃষকদের দৈহিক নির্যাতনের ব্যবস্থা করা হয়। এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য ১৮৩২ সালে সম্রাট ভ্যানডেন বচকে নিরংকুশ স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রদান করেন।
জাভার কৃষক ও সমাজের উপর এর প্রভাব
অর্থনৈতিক শোষণ:
কালচার নীতি ছিল আধা দাসত্ব মূলক, অর্থনৈতিক শোষণ এবং জাভা থেকে সম্পদ নিঃসরণের একটি পদ্ধতি। জাভাবাসীর জন্য এটি ছিল Extra Economic Exploitation বা অতিরিক অর্থনৈতিক শোষণ। এটাকে Vulture System (ভালচার সিস্টেম) বা শকুনি ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করা হয়। ডাচরা এ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাভাকে শুকুনের মত কুড়ে কুড়ে খেয়েছে।
শ্রেণী বিভাজন ও শ্রেণী সংঘাত:
নতুন ব্যবস্থা সমাজে আমুল পরিবর্তন সাধন করে।এই নীতি সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে দেয় এবং সামাজিক শ্রেণীবিভাজন ও শ্রেণী-সংঘাত সৃষ্টি করে।
প্রিয়ায়ী (Priyai),
সান্ত্রী (Santri) এবং
গ্রামিনী (Gramini)
এই তিনটি শ্রেণীর মধ্যে প্রিয়ায়ীরা ছিল ডাচদের সহযোগী। অর্থবিত্তে বাংলার জমিদারদের মতো তারা একটি নতুন শ্রেণীর শ্রেণীতে পরিণত হয়। সান্ত্রীরা ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও একমাত্র গ্রামীনীরাই ছিল এ ব্যবস্থার শিকার। তাদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। যে প্রিয়ায়ীরা ছিল গ্রাম প্রধান, গ্রামের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, তারাই নতুন ব্যবস্থায় উপনিবেশিক শোষণ ও নিপীড়ন যন্ত্রে পরিণত হয়।
খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষ:
সরকারি পণ্যে শ্রম দিতে গিয়ে ধান চাষ ব্যাহত হয়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পাঁচ ভাগের এক অংশ জমির চাইতে অনেক বেশি জমিতে সরকারি পণ্য চাষ করতে বাধ্য করা হতো। নিজেদের পণ্যে নিজেদের ব্যয় করার মত অধিকার ছিল না। ধানের মূল্য বৃদ্ধি পেলে জাভাতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ১৮৪৩ থেকে ৪৮ পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে বহু মানুষ প্রাণ হারায়। খাদ্যাভাব বা নানা কারণে লোকজন অন্যত্র চলে যায়। জাভা শ্মশানে পরিণত হয়। বাংলার ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের মতো।
According to D.G.E Hall
“This caused serious famine and large Exodus of people,” “this caused an agitation against the system which little by little grew in intensity” (See- A history of Southeast Asia, 4th edition, Macmillan, 1981, P-.590)
মুদ্রাস্ফিতি:
মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার বাজারে প্রচুর তাম্র মুদ্রা ছাড়লে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। ফলে খাদ্য সামগ্রী দাম আরো বৃদ্ধি পায়।
জাভার আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও গুরুত্ব বৃদ্ধি:
বিশ্ব বাজারে যাবার যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ডাচরা জভাকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করলে পরোক্ষভাবে দ্বীপপুঞ্জের কিছু বৈষয়িক উন্নতি সাধিত হয়।
আনুষঙ্গিক উন্নয়ন:
রেলপথ, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন ইত্যাদির প্রচলন করা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি সাধিত হয়। তবে জাভার বাহিরের বহু এলাকার বিচ্ছিন্নবাদী হয়ে ওঠে, কেননা যাবার বাইরে ডাচদের শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তারা এখানে জলদস্যু দমনে ব্যর্থ হয়েছিল।
ডাচ অর্থনীতি ও রাজনীতিতে কালচার সিস্টেমের প্রভাব
ডাচ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি
কালচার সিস্টেম ছিল ডাচ অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আশীর্বাদস্বরূপ। এই নীতি প্রয়োগ করে ডাচরা প্রায় 823 মিলিয়ন গিল্ডার হল্যান্ডের রাজকোষে জমা করে। ডাস্ট সরকার প্রাপ্ত সম্পদে নেদারল্যান্ডের অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।
According to Dr. Sardesai-
“The system as a whole performed a miracle for the Dutch economy an enormous profit flowed into the Netherlands treasury” (See- Southeast Asia past and present, Vikas publishing house, Delhi, 1981, Page-139
দেউলিয়াত্ব রোধ:
কালচার সিস্টেমের মাধ্যমে আহারিত অর্থের দ্বারা ডাচ সরকার তাদের আসন্ন দেউলিয়াত্ব রোধ করতে সক্ষম হয়। তারা সকল ঋণ পরিশোধ করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি পুশিয়ে নেয় এবং বিপরীতে অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়।
According to Dr. Sardesai-
The culture system thus succeeded phenomenally in its initial purpose, saving the Netherlands from bankruptcy. (Ibid, P.139)
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কর্তৃত্ব:
জাভা দ্বীপপুঞ্জ থেকে কালচার সিস্টেমের মাধ্যমে যে সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করা হতো সেগুলো ‘দ্য নেদারল্যান্ডস ট্রেনিং সোসাইটি’ নামক সম্রাটের একক কোম্পানির মাধ্যমে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করা হতো। এই পণ্যের একচেটিয়া বাণিজ্যে করে এটি তৎকালীন বিশ্বের দ্বিতীয় বিখ্যাত কোম্পানিতে পরিণত হয়।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করার জন্য হল্যান্ডের প্রচুর জাহাজের প্রয়োজন হয়। ফলে কালচার সিস্টেমের মাধ্যমে আহড়িত অর্থে হল্যান্ডে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ ঘটে। তারা বড় বড় জাহাজ তৈরি করে এবং বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে চলে আসে।
যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন:
বেলজিয়ামের সাথে যুদ্ধ বাঁধলে হল্যান্ড যুদ্ধের ব্যবহার কালচার সিস্টেমের মাধ্যমে আহড়িত অর্থ থেকেই বহন করতে সক্ষম হয়।
উন্নয়ন কর্মকান্ড
ডাচ সরকার রেলপথ নির্মাণ, টেলিফোন, টেলিগ্রাফসহ অন্যান্য বড় বড় উন্নয়ন কর্মকান্ড ও জনহীতকর কার্যাবলী সম্পাদন করতে সক্ষম হয়।
শিল্প ও কৃষি বিপ্লব
উদ্বৃত্ত তথ্য দিয়ে ডাচ সরকার নেদারল্যান্ডের শিল্প ও কৃষি বিপ্লব ঘটায়। হল্যান্ডের বার্ষিক বাজেটের ৬০ মিলিয়ন গিল্ডারের মধ্যে 18 মিলিয়ন আসতো দ্বীপপুঞ্জ থেকে। বৃহৎ বাজেটের মাধ্যমে হল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবর্তন
শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফলে উদীয়মান পুঁজিপতি, বুর্জোয়া ও পাতি বুর্জুয়া শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। নব্য শ্রেণীর মাধ্যমে হল্যান্ডের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। রক্ষণশীল ও উদারপন্থি দুটি দলের জন্ম হয়। উদারপন্থীদের চাপে সরকার ১৮৭০ সালের দিকে এই পলিসি সিথিল করে এবং উদারনীতির (ইথিক্যাল পলিসির) যাত্রা শুরু হয়।
Culture System
সমালোচনা এবং ব্যর্থতার কারণ
কালচার সিস্টেমের ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। ডাচ সরকারের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত সফল একটি ব্যবস্থা ছিল। অন্যদিকে দ্বীপবাসীর দৃষ্টিতে এনেছিল একটি ভয়ানক শোষণ মূলক নীতি। ডাচ বুর্জুয়া বুদ্ধিজীবীদের মতে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্বীপপুঞ্জের লোকজন কিছুই পায়নি। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে একচেটিয়া ভাবে ডাচদের উন্নতির চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বীপবাসীর স্বার্থের প্রতি নজর দেওয়া হয়নি।
ভেনডেন বচের নীতিমালায় পরবর্তীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। অনেক বিকৃতি ঘটেছে। পাঁচ ভাগের এক অংশ ভূমিতে সরকারি পণ্য চাষ করার কথা থাকলেও অনেক সময় অনেক বেশি ভূমি বরাদ্দ নেয়া হতো। সরকারি পণ্য চাষ করলে ভূমিকর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কত থাকলেও কর আদায় করা হতো।
সরকারি পণ্য উৎপাদনে ধান চাষের সমান পরিশ্রমের কথা থাকলেও বাস্তবে ধান চাষের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগতো। কফি চাষ করতে লাগতো 90 দিন আর আখ চাষে ধানের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগতো। নীল চাষ ছিল সবচাইতে বেশি নির্যাতনমূলক।
ভিন্ন কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হলে কৃষককে দায়ী করা হতো যা ছিল ভেনডেন বচের নীতিমালার পরিপন্থী। এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার জন্য ভেনডেন বচকে নিরংকুশ স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রদান করা ছিল এই নীতিমালার অকার্যকারিতার প্রমাণ।
১৮৩০ সালের শুরু হয়ে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। কিছু কিছু পন্যে 1877 সাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থা কার্যকর রাখা হয়। ১৮৫০ সালের দিকে স্বয়ং নেদারল্যান্ডেই এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। ডাচ লেখক এডওয়ার্ড ডুয়েস ডেকার তার Max Havelaar (1860) নামক গ্রন্থে এ ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন।
ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডে যে লিভারেল পন্থীদের উদ্যান ঘটে তারা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অতঃপর ডাচ সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করে সেখানে দ্বীপপুঞ্জের কল্যাণের কথা চিন্তা করে লিবারেল পলিসি তথা উদারনীতি গ্রহণ করে।
তবে তাদের যা প্রয়োজন ছিল এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা তা করে নিয়েছে। সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে হল্যান্ডের/ডাচদের জন্য এটি একটি সফল ব্যবস্থা। অন্যদিকে দ্বীপবাসীর জন্য এটি একটি ব্যর্থ, নিপীড়নমূলক ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ছিল। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে দ্বীপবাসী কিছু উন্নত জীবন ব্যবস্থার সন্ধান পেয়েছিল।
The Cultivation System directly contributed to the impoverishment of Javanese peasants but indirectly improved their standard of living
পরিশেষে-
আমরা বলতে পারি বিপর্যস্ত হল্যান্ডকে রক্ষা করতে কালচার সিস্টেম ছিল সামন্ততান্ত্রিক একচেটিয়া কর্তৃত্ববাদী,সরকার নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য তান্ত্রিক শোষণ ব্যবস্থা। এতে তারা দারুণভাবে সফল হয়েছিল। কিন্তু এর ব্যবস্থার শোষণ, অনিয়ম, অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে শুধু দ্বীপপুঞ্জেই নয় বরং হল্যান্ডেই এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা এবং প্রতিবাদ দেখা দেয়। শেষে উদারপন্থীদের জন্ম হয় এবং নতুন নীতি ‘লিবারেল পলিসি’ প্রবর্তন করা হয়।
According to encyclopedia Britannica
From the government's point of view the cultivation system was an overwhelming success, the effects of the system for the Javanese were however of more dubious value ( See-Encyclopaedia Britannica, 15th edition London, Vol. 21, Page- 238)
আরো পড়ুন-
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নামকরণ, অবস্থান, গুরুত্ব, প্রধান ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS (General Education)
Lecturer
Department of Islamic History Culture
No comments:
Post a Comment