হযরত আবু বকর (রা.): ইসলামের ত্রাণকর্তা
Hazrat Abu Bakr (R.): The Savior of Islam
হযরত আবু বকর কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন?
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু! নবীদের তালিকার বাহিরে মানুষের কাতারে মুহাম্মদ (স.) এর পরে যার অবস্থান। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে জাহিলি যুগেও যিনি ছিলেন একজন শ্রদ্ধাভাজন সম্মানিত ও সজ্জন ব্যক্তি। ইসলাম গ্রহণের পর অকাতরে নিজের অর্থ-সম্পদ ইসলামের খাতে ব্যয় করেছেন। হিজরতের কঠিন সময়ে তিনি ছিলেন মুহাম্মদ (স.) এর সঙ্গী। রাসুলুল্লাহ (স.) এর নির্দেশ পালনে যিনি থাকতেন সদা তৎপর। যেকোনো ভালো কাজেই তাকে সর্বাগ্রে পাওয়া যেত। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পরেও তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ভয়ানক বিপর্যয় থেকে ইসলাম ও মদিনা রাষ্ট্রের সংহতি বিধান করেছেন। খিলাফাত লাভের পূর্বে এবং পরে ইসলামের খাতিরে তার যে অবদান সেজন্য ইতিহাসে তিনি ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসেবে সুপরিচিত।
আবু বকরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু 573 সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মূল নাম আব্দুল্লাহ। পিতার নাম ওসমান। পিতার কুনিয়ত আবু কুহাফা। মাতার নাম উম্মুল খায়ের সালমা। উপাধি আতিক এবং সিদ্দিক। কুনিয়ত বা ডাক নাম হচ্ছে আবু বকর। অফিসিয়ালি তিনি আবুবকর ইবনে আবী কোহাফা নামে পরিচিত। তিনি ব্যবসায়ে বেশি সুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ (স.) এর বন্ধু এবং খেলার সাথী ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। তার কন্যা হযরত আয়েশা (রা.) কে রাসুলুল্লাহ (স.) বিবাহ করেছিলেন। এই দিক থেকে তিনি মুহাম্মদ (স.) এর শশুর ছিলেন।
আবু বকরকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলার কারণ
Hazrat Abu Bakr (R.): The Savior of Islam
আবু বকরকে কেন ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় তা বিশ্লেষণ করতে হলে ইসলাম গ্রহণের পর থেকে খলিফা হওয়ার পূর্বে এবং পরে ইসলামের প্রতি তার যে অবদান তা বিশ্লেষণ যোগ্য।
ক. খলিফা হওয়ার পূর্বে ইসলামের প্রতি আবু বক্কর এর অবদান
ইসলাম গ্রহণ:
বয়স্কদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। ইয়েমেন থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শেষে ফিরে আসার পর তিনি মুহাম্মদ (স.) এর নবুযত প্রাপ্তি এবং ইসলাম প্রচারের কথা জানতে পেরে মুহাম্মদ (স.) এর সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। সমাজে তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা থাকার কারণে তাঁর ইসলাম গ্রহণ বেশ প্রভাব ফেলে। তার অনুকরণে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করে। তার প্রচেষ্টায় হযরত উসমান, তালহা, জুবায়ের, আব্দুর রহমান এবং সাদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে যারা সমাজে প্রভাবশালী ছিলেন।
ক্রীতদাস মুক্ত করণ:
আবু বকর একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসা করে তিনি বেশ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে হযরত বেলাল সহ বেশ কিছু কৃতদাসের উপর তাদের মনিবরা ভয়ানক অত্যাচার শুরু করেছিল। হযরত আবু বকর নিজ অর্থ ব্যয় করে হযরত বেলালসহ সাতজন দাস-দাসীকে তাদের মনিব থেকে ক্রয় করে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন।
অকাতরে অর্থ দান:
ইসলাম গ্রহণের পর দাস-দাসী মুক্তকরণ ছাড়াও ইসলামের খাতিরে আবুবকর অকাতরে অর্থ দান করেছেন। ইসলাম গ্রহণের সময় তাঁর সম্পদ ছিল 40 হাজার দিরহাম। অথচ হিজরতের সময় তার সম্পদ ছিল মাত্র 5 হাজার দিরহাম। একটি যুদ্ধ প্রস্তুতিকালে রাসুল (স.) এর আহবানে তিনি তার সমূদয় অর্থ এবং গৃহের সবকিছূ দান করে দিয়েছিলেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন- ইসলামের খেদমত এবং দান সদকা করার ব্যাপারে হযরত আবু বকরকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি।
আরও পড়ুন-
বিদায় হজ্বের ভাষণ এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক ঘোষিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কারাবলী
হিজরতের সফরসঙ্গী:
মক্কার কুরাইশরা যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল সেই রাতে হিজরতের সাথী হিসেবে আবু বকর রাসুলুল্লাহ (স.) এর সঙ্গী ছিলেন। মক্কায় ইসলামের দুর্দিনে কোন একদিন মুহাম্মদ (স.) আবু বকরকে বলেছিলেন যে তিনি তাকে সাথে নিয়ে হিজরত করবেন। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে ঐ দিন থেকে হযরত আবুবকর রাতের বেলা ঘুমাতেনা। তার প্রমাণ হিজরতের রাতে মুহাম্মদ (স.) তাকে ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই তিনি দরজা খুলে বেড়িয়ে আসেন। সওর পর্বতে অবস্থানকালে শত্রুদের আনাগোনা দেখতে পেয়ে তিনি রাসুলের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর কথাই পবিত্র কোরআনে উল্লখ আছে।
বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ:
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মুহাম্মদ (স.) এর জীবদ্দশায় সংঘটিত বদর, ওহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বীর যোদ্ধা না হলেও যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার পেছনে ছিল তার বড় অবদান। যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ কৌশল ঠিক করা এবং রসদ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে তিনি মুহাম্মদ (স.) এর ডান হস্ত হিসেবে কাজ করেছেন।
উমরাতুল কাযায় নেতৃত্ব দান:
হুদায়বিয়ার সন্ধির পরের বছর মদিনার মুসলিমরা উমরাতুল কাযা আদায়ের জন্য মক্কায় গমন করে। দ্বীনি ব্যস্ততার কারণে রাসুলুল্লাহ (স.) এই সফরে হজে যেতে পারেননি। তিনি হযরত আবু বকর কে এই দলের নেতা নিযুক্ত করেন। হযরত আবু বকর দক্ষতার সাথে হজ্ব কাফেলা নিয়ে মক্কা গমন করেন এবং হজ্জ সমাপ্ত করে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সাথে মদিনায় ফিরে আসেন। এতে করে নেতৃত্বদানে আবু বকরের দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
মসজিদে নববীতে ইমামতি:
আবু বকরের প্রতি রাসুল সাল্লামের আস্থা ও ভালবাসার ছিল সীমাহীন। যোগ্যতা দক্ষতা এবং ইসলামের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। সেজন্য জীবনের শেষদিকে অসুস্থতার সময় যখন তিনি ইমামতি করতে পারেনি তখন তিনি আবু বকরকে ইমাম হয়ে নামাজ পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ইমামতি প্রদানের মাধ্যমে মূলত পরবর্তী নেতৃত্ব কে দেবেন তার ইঙ্গিত রয়েছে।
প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা
রাসূলুল্লাহ (স.) এর ইন্তেকাল সাহাবীরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। হযরত ওমরসহ অনেকেই উদভ্রান্তের মতো আচরণ করছিলেন। সে সময় এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত আবু বকর অত্যন্ত কৌশলে কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে তাদেরকে স্বাভাবিক করতে সক্ষম হন। তিনি সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন। ‘মোহাম্মদ (স.) একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন, তার আগে অনেক রাসুল পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন তাহলে তোমরা কি তোমাদের আগের বিশ্বাসে ফিরে যাবে?
এ আয়াত শ্রবণ করার পর হযরত ওমরসহ অন্যান্যরা তাদের সম্বিত ফিরে পান এবং তারা বুঝতে পারেন যে সত্যিই মুহাম্মদ (স.) ইন্তেকাল করেছেন।
এছাড়া খলিফা নির্বাচন নিয়ে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সাকিফায়ে বনু সাঈদাতে যে বৈঠক হয়েছিল এবং যে বিরোধ ও বিভক্তি তৈরি হয়েছিল হযরত আবু বকর এর বিচক্ষণতার কারণেই সে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
আরও পড়ুন-
খ. খলিফা হিসেবে ইসলামের প্রতি আবু বকরের অবদান
Hazrat Abu Bakr (R.): The Savior of Islam
উদ্বোধনী ভাষণ:
খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর হযরত আবু বকর যে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে আধুনিক বিশ্বের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রীতিনীতি সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। ঐতিহাসিক মোহাম্মদ আলী বলেন- চমৎকার বক্তৃতার প্রতিটি শব্দ জ্ঞান সমৃদ্ধ এবং এটা মুসলিম জাহানের কাছে আলোক বর্তীকা স্বরূপ।
উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বললেন-
হে মুসলমানগণ, আপনারা আমাকে আপনাদের নেতা নির্বাচন করেছেন। যদিও আমি আপনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নই। আমি আপনাদের সবার পরামর্শ এবং সাহায্য কামনা করি। আমি ন্যায়পথে থেকে কাজ করলে আপনারা আমাকে সমর্থন করবেন। ভুল করলে উপদেশ দিবেন…….আমার দৃষ্টিতে ক্ষমতাশালী দুর্বল সবাই সমান এবং উভয়ের প্রতি আমি সঙ্গত আচরণ করতে চাই। আমি আল্লাহর রাসূলের হুকুম অনুসারে কাজ করলে আপনারা আমাকে মেনে চলবেন আল্লাহ ও রাসূলের কানুন অমান্য করলে আপনাদের আনুগত্য লাভের দাবি আমার থাকবে না।
বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা দমন:
হযরত আবু বকর এক জটিল পরিস্থিতিতে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ইতোমধ্যে মদিনার আশেপাশহ আরবের বিভিন্ন বেদুইন গোত্র বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। মদিনা রাষ্ট্রের কার্যক্ষমতা শুধুমাত্র মদিনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল । আবু বকর সেনাবাহিনীকে মোট ১১ টি ইউনিটে বিভক্ত করেন। মদিনা নিরাপত্তার জন্য একটি বাহিনী রেখে প্রত্যেকটি বাহিনীকে একজন যোগ্য সেনাপতির নেতৃত্বে বিদ্রোহ দমনে প্রেরণ করেন। বিদ্রোহীদেরকে প্রথমে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।ইসলাম গ্রহণের অস্বীকার করলে তাদের প্রতি আক্রমন করা হয়।। তবে অনেক গোত্রই আত্মসমর্পণ করে পুনরায় ইসলামে প্রবেশ করে। তাঁর প্রেরিত প্রত্যেকটি বাহিনী শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করে।
ধর্মত্যাগীদের দমন বা রিদ্দার যুদ্ধ:
ইসলামের সুদিনে দলে দলে লোকজন ইসলাম গ্রহন করতে থাকে। এদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন ছিল রাসুলুল্লাহ সে সময় পাননি। অধিকাংশ সময়ই তিনি মদিনাতে ব্যয় করেছেন। তারা অনেকে অন্যের দেখাদেখি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। তাদের অনেকেই ইসলামের মৌলিক বিষয়, আকিদা এবং দায়িত্ব-কর্তব্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি। স্বাধীনচেতা বেদুইন গোত্রগুলো ইসলামের কঠোর নৈতিক অনুশাসন মানতে প্রস্তুত ছিলনা। তাদের নৈতিক শিক্ষার যথেষ্ট অভাব ছিল।ফলে রাসুলুল্লাহ (স.) এর ইনতেকালের পরপরই তারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে চাইলো। তাদের অনেকেই যাকাত দিতে অস্বীকার করল। আবুবকর এই ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তিনি তাদেরকে চূড়ান্তরূপে দমন করে মদিনা রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করেন। ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই যুদ্ধের নামই রিদ্দার যুদ্ধ।
ভন্ড নবীদের দমন
রাসূলুল্লাহ (স.) এর জীবনের শেষদিকে ভন্ড নবীদের উত্থান ঘটতে থাকে। হযরত আবু বকরের খিলাফত কালকে সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে ভণ্ডনবীরা। নবুয়তকে একটি লাভজনক ইহলৌকিক বিষয় মনে করে তারা নিজেরা নবুয়ত দাবি করে। ইতিহাসের চারজন প্রসিদ্ধ ভন্ড নবীর উল্লেখ রয়েছে । এরা হলেন-
আসওয়াদ আনাসী ইয়েমেনে
মুসাইলামাতুল কাজ্জাব ইয়ামামায়
তোলায়হা নজদে
সাজাহ ইরাকে
এই চারজন ভন্ড নবীর মধ্যে মুসায়লামা ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী।দুর্বল চিত্তের কিছু মুসলিম এদের বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। এদের মধ্যে সাজাহ ছিলেন নারী ভন্ড নবী। সাজা এবং মুসাইলামা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। হযরত আবু বকর এদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত সামরিক বাহিনী প্রেরণ করে চারজন ভন্ড নবীকে দমন করেন। ভন্ড নবীদের দমনের মাধ্যমে আবুবকর নবুয়ত এবং ইসলামের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করেন।
আরবের বাহিরে সামরিক অভিযান
হযরত আবু বকর আরবের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরবের বাহিরে বেশকিছু সামরিক অভিযান প্রেরণ করেছেন।
পারস্য অভিযান
রিদ্দার যুদ্ধের সময় পারস্য বাহরাইনের ধর্মত্যাগীদের সহযোগিতা করেছিল। খিলাফতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করার পর আবু বকর পারস্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং মুকান্নার নেতৃত্বে সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। সেনাপতি হরমুজের নেতৃত্বে পারসিক বাহিনীর হাফিরের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সাথে পরাজিত হয় এবং হরমুজ নিহত হন। অতঃপর মুসলিম বাহিনী হীরা, আনবার, আইনুত তামুর জয় করে এবং একই সাথে তারা জনৈক পারসিক রাজকুমারী দ্বারা রক্ষিত একটি দুর্গ অধিকার করেন।
সিরিয়া অভিযান
রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস রাসুলের জীবদ্দশায় তার দূতকে সসম্মানে গ্রহণ করলেও আবু বকরের খিলাফতকালে সীমান্তবর্তী বেদুইনদেরকে তিনি সহায়তা করে ইসলামী খেলাফতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। কিন্তু মুতার শাসক শুহরাবিল রাসুলের দুতকে হত্যা করেছিলেন ফলশ্রুতিতে সংগঠিত মুতার যুদ্ধেও মুসলিমগণ চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে সিরিয়া সীমান্তে রোমানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল সিরিয়া অভিযানের জন্য আবু বকর সামরিক বাহিনীকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে ওসামা, ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান, আবু উবাইদা এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ এর নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করেন। শেষ পর্যন্ত মুসলিমরা বিজয় অর্জন করে এবং আজানাদাইনের যুদ্ধে রোমান বাহিনী পরাজিত হয়।
কঠেরতা এবং কোমলতা নম্রতা ও দৃঢ়তার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল আবু বকরের চরিত্রে। প্রয়োজনে তিনি অত্যন্ত কোমল ও নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আবার প্রয়োজনে তিনি ইস্পাত কঠিন দৃঢ় দিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পূর্বে নিজের অর্থ সম্পদ ব্যয় করে শ্রম এবং যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলামের প্রতি নিজেকে উজাড় করেছেন। আবার খলিফা হওয়ার পর তাঁর শক্তি সামর্থ্য ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে তিনি দুষ্কৃতিকারী ও বিদ্রোহীদের দমন করে ইসলাম ও মদিনা রাষ্ট্রের সংবিধান করেছেন। আসন্ন ভয়ানক বিপর্যয় থেকে ইসলামী রাষ্ট্র কে তিনি রক্ষা করে পুনরায় সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। আর তার এই অসামান্য অবদানের জন্য ইতিহাসে তিনি ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিত এবং মন্তব্যটি তাঁর প্রতি যথার্থ হয়েছে।
হযরত আবু বকর কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন?
হযরত আবু বকর কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন?
হযরত আবু বকর কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন?
হযরত আবু বকর কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন?
আরও পড়ুন-
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবন ও কর্ম: নবুয়ত লাভের পূর্ব পর্যন্ত
আরও পড়ুন-
মুহাম্মদ (স.) এর হিজরত: কারণ ও ফলাফল
জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য,সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে মামলুকদের অবদান
No comments:
Post a Comment