Breaking

Tuesday 21 February 2023

মৌলিক গণতন্ত্র: পরিচিতি, প্রেক্ষাপট, কাঠামো ও ত্রুটি বিচ্যুতি



মৌলিক গণতন্ত্র:

পরিচিতি, প্রেক্ষাপট, কাঠামো ও ত্রুটি বিচ্যুতি



মৌলিক গণতন্ত্র কী?

আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর পাকিস্তানে যে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তাই মৌলিক গণতন্ত্র। মৌলিক গণতন্ত্র হচ্ছে এক ধরনের সীমিত গণতন্ত্র যেখানে কেবল কিছু নির্দিষ্ট লোকের হাতে জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার ছিল। আইয়ুব খানের আমলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মোট ৮০ হাজার বি.ডি মেম্বার মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় থানা কাউন্সিল, জেলা কাউন্সিল, বিভাগীয় কাউন্সিল এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিল। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত এই বি.ডি মেম্বাররাই ছিলেন মৌলিক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। 






মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট উদ্দেশ্য কারণ


  1.  সংসদীয় সরকারের অকার্যকারিতা 

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এখানে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। পাকিস্তানের সরকার ব্যবস্থা ছিল মূলত সংসদীয় এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার সংমিশ্রণ। আইয়ুব খান মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন যে পাকিস্তানের মতো একটি অনুন্নত, পশ্চাদপদ, চরম দরিদ্র এবং অশিক্ষিত দেশে পাশ্চাত্য ধাঁচের গণতন্ত্র অনুপযোগী।  তার দৃষ্টিতে এখানে উপযোগী হচ্ছে নিচ থেকে উপরে স্তরভিত্তিক পরোক্ষ গণতন্ত্র তথা মৌলিক গণতন্ত্র। 


  1. রাজনৈতিক দলসমূহের ব্যর্থতা:

১৯৫৬ সালের পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের ব্যর্থ হয়। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সাতবার মন্ত্রিসভার রদবদল ঘটে। ক্ষমতা দখলের উপর আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা এবং তাদের দুর্নীতিকে সম্মুখে নিয়ে আসেন। এসব কারণে প্রচলিত রাজনীতির প্রতি তার চরম ঘৃণা ছিল। মৌলিক গণতন্ত্র চালু করার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা তিনি বহুলাংশে দায়ী করেন। 


  1. সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বয়:

আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল সরকারি কর্মচারী এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাঝে সমন্বয় সাধন করে গ্রামীণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। আইয়ুব খান মনে করেন এর ফলে সরকারি কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিরা  জনকল্যাণে নিবেদিত হবেন। 


  1. স্বীয় ক্ষমতার স্থায়িত্ব বিধান:

আইয়ুব খান মনে প্রানে একজন সামরিক স্বৈরশাসক ছিলেন। রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদদের প্রতি ছিল তার চরম ঘৃণা। সেজন্য তার কোন রাজনৈতিক দলও ছিল না। দলীয় এবং প্রত্যক্ষ নির্বাচনকে তিনি ভয় পেতেন।  সেজন্য রাজনৈতিক দলের বাহিরে গিয়ে নিজের ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্যই তিনি এই নতুন ব্যবস্থা মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। 


  1. নেতৃত্বের মেরুকরণ:

প্রচলিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বাইরে গিয়ে আইয়ুব খানের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে একটি নতুন শ্রেণী তৈরি করা যারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি না করে বরং সহযোগিতা করবে। নতুন এই শ্রেণি সনাতন এলিটদের স্থান পূরণ করবে। আশি হাজার মৌলিক গণতন্ত্রীর একটি বিরাট অংশ ছিল আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের নতুন প্রোডাক্ট। 


  1. সমর্থক বলয় তৈরি করা:

সামরিক ক্ষমতা করায়ত্ব করার পাশাপাশি আইয়ুব খানের উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক লোকদের মধ্যে একটি সামর্থক বলয় তৈরি করা। বি.ডি মেম্বাররা ছিলেন আইয়ুব খানের সেই সমর্থকগোষ্ঠী । বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিষ্ক্রিয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে শাসকগোষ্ঠীর একটি অংশকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তার বলয় তৈরি করার জন্যই তিনি মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। 


  1. সরকার বিরোধী আন্দোলন নস্যাৎ করা

আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ক্ষমতাকে সংকুচিত করার চেষ্টা করেন। সরকার বিরোধী আন্দোলন কে নস্যাৎ করার জন্যই তিনি মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ভোটাধিকার দিয়ে আপামর জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে রাজনীতিবিদদের কে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেন। 


  1. ধর্মীয় কারণ:

অন্যান্য শাসকদের মতো আইয়ুব খানও  মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের পেছনে ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। তিনি হযরত ওমর এর উদাহরণ দিয়ে বলতেন- হযরত ওমর একজন সফল শাসক অথচ তাঁর কোন দল ছিল না। ছিল উপদেষ্টা পরিষদ। তার দৃষ্টিতে দলীয় অবস্থান থাকলে নিঃস্বার্থভাবে জনগনের জন্য কাজ করা যায় না।  ইসলামের খলিফা নির্বাচনের দৃষ্টান্ত উত্থাপন করে তিনি বলতে চেয়েছেন- জনগণের স্বার্থে খলিফা নির্বাচিত হতেন দলীয় টিকেটে নয়। ১৯৬০ সালের ১৫ জুন লাহোরে এক বক্তব্যে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রকে ইসলাম সম্মত উল্লেখ করে বলেন-  “This is the real Islamic method of election” 


আরও পড়ুন-

বাঙ্গালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি,  Ethnographic identity of the Bengali nation





মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন

আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানে কোন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রকৃত অর্থে জাতীয় নির্বাচনী কাঠামো প্রস্তুত হয়নি। ১৯৫৯ সালের ৩০শে এপ্রিল ও পহেলা  মে করাচিতে অনুষ্ঠিত গভর্নরদের সম্মেলনে আইয়ুব খান সর্বপ্রথম মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। ১২- ১৩ জুন গভর্নরদের সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে আলোচনার পর ২৬ শে অক্টোবর ১৯৫৯ ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের আদেশ জারি করেন।   



মৌলিক গণতন্ত্রের কাঠামো

  1. ইউনিয়ন কাউন্সিল

মৌলিক গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন কাউন্সিল এটি  সর্বনিম্ন স্তর। এর সদস্য সংখ্যা 15 জন। এরা সবাই ছিলেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত।  সমগ্র পাকিস্তানে ইউনিয়ন কাউন্সিলের সংখ্যা ছিল ৭৬১৮ টি। পাকিস্তানের সমগ্র পাকিস্তানে ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ৮০ হাজার। পূর্ব পাকিস্তানের ৪০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানে ৪০ হাজার। ইউনিয়ন কাউন্সিলের এই ৮০ হাজার প্রতিনিধি মৌলিক গণতন্ত্রী বা বি.ডি মেম্বার হিসেবে পরিচিত। এই বিডি মেম্বারগণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতেন। তাদের মৌলিক দায়িত্ব ছিল ইউনিয়ন  কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করা। 


  1. থানা কাউন্সিল/তফশিল কাউন্সিল

দ্বিতীয় স্তরে ছিল মৌলিক গণতন্ত্রের ছিল থানা কাউন্সিল বা তহশীল কাউন্সিল। এটি শহর এলাকায় মিউনিসিপাল কমিটি আর  সামরিক এলাকায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নামে ছিল। সংশ্লিষ্ট থানা বা পৌর এলাকার সকল ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সমসংখক সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে থানা কাউন্সিল গঠিত হতো। মহকুমা প্রশাসক এসডিও ছিলেন এর সভাপতি।  


  1. জেলা কাউন্সিল

মৌলিক গণতন্ত্রের দ্বিতীয় স্তর জেলা কাউন্সিলর চেয়ারম্যান ছিলেন ডিসি। জেলা কাউন্সিলর সদস্য সংখ্যা সর্বমোট 40 জন। অর্ধেক নির্বাচিত এবং অর্ধেক সরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচিতদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক আবার ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। জেলার জেলার শিক্ষা স্বাস্থ্য রাস্তাঘাট কৃষি শিল্প উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজগুলো দেখাশোনা করা এ কাউন্সিলের দায়িত্ব। । 


  1. বিভাগীয় কাউন্সিল

মৌলিক গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ স্তর ছিল বিভাগীয় কাউন্সিল। এ কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার। এর সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। অর্ধেক নির্বাচিত অর্ধেক সরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অর্ধেক আসতো ইউনিয়ন কাউন্সিলর নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে। বিভাগীয় কাউন্সিলের দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট জেলা সমূহের কাজের  সামন্বয় সাধন করা।   



আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, সীমানা ও ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ





মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচন 


  1. ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন:

১৯৬০ সালের ১১ই জানুয়ারি সমগ্র পাকিস্তানে মৌলিক গণতন্ত্রের প্রথম স্তর তথা ইউনিয়ন কাউন্সিলর নির্বাচন সম্পন্ন হয়।  এতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে মোট ৮০ হাজার বি.ডি মেম্বার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। 


  1. হ্যা না ভোট:

আইয়ুব খান নিজের অবস্থানকে সুসংহত করা এবং বৈধতাদানের জন্য ১৯৬০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি হ্যাঁ না ভোটের আয়োজন করেন। এই নির্বাচনে আইয়ুব খানের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। মৌলিক গণতন্ত্রের ৮০ হাজার মেম্বার এখানে হ্যা না ভোট দিয়েছিলেন। 


  1. জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন:

মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনেই ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের ১৫৬ আসন বিশিষ্ট জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আশি হাজার বি.ডি মেম্বার এখানে নির্বাচক মন্ডলী হিসেবে ভোটদান করেন। এছাড়া ১৯৬২ সালের ৬ই মে প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচনেও মৌলিক গণতন্ত্রীরা ভোট দান করেন। 


  1. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন:

১৯৬০ সালে হানা ভোটে আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার মেয়াদ শেষ হয় ১৯৬৫ সালে।  অতঃপর মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে আবারও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী দল (COP)  ফাতেমা জিন্নাকে প্রার্থী করে। ৮০ হাজার বি.ডি মেম্বার এই নির্বাচনে ভোটদান করে। আইয়ুব খান অল্প ভোটের ব্যবধানে ফাতেমা জিন্নাহকে পরাজিত করে পুনরায় রাষ্ট্রপতি হন। 







মৌলিক গণতন্ত্রের ত্রুটি বিচ্যুতি/সমালোচনা


  1. ভোটাধিকার হরণ:

মৌলিক গণতন্ত্রে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে ভোটাধিকার দিয়ে জনগণের সার্বজনীন ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচনে শুধুমাত্র ৮০ হাজার বি.ডি মেম্বাররাই ভোট দিতে পারতেন। তবে শুধু ৮০ হাজার বি.ডি মেম্বারকে জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত করতেন। 


  1. দুর্নীতির পথ সুগম করা:

৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রের উপর সরকারের প্রভাব ছিল প্রত্যক্ষ।  যে কোনো ভাবে এসব  B.D Member দেরকে সরকারের পক্ষে নিয়ে আসা সহজ ছিল। এসব বি.ডি মেম্বাররা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। শূন্য হাতে যারা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন দেখা গেল কয়েক বছরের মাথায় তাদের বার্ষিক আয় তৎকালীন 40,000 এ পৌঁছে। এর ফলে দুর্নীতির পাশাপাশি সরকারের অপচয় বৃদ্ধি পায়। 

 

  1. রাজনৈতিক অনীহার সৃষ্টি:

মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক অনিহার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে সরকার সফল হয়।  কেননা আইয়ুব খানের উদ্দেশ্যই ছিল জনগণকে রাজনীতি বিমুখ করে রাখা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনে দীর্ঘকাল যাবত ভোট না দেওয়ার কারণে জনগণ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। 


  1. জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা:

মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে আইয়ুব খান জাতীয় রাজনীতি থেকে জনগণের দৃষ্টি বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করেন। যাতে করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে। 


  1. অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা:

মৌলিক গণতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র নয় । এই ব্যবস্থায় জনগণের ভোটাধিকার ছিল সীমিত। তাছাড়া থানা কাউন্সিল, জেলা কাউন্সিল, এবং বিভাগীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধি ছিল না। মৌলিক গণতন্ত্রকে অনেকে মৌলিক প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 




  1. শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি:

আইয়ুব খানের উদ্দেশ্য ছিল মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটি অনুগত্য শ্রেণী তৈরি করা যারা তার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করবে।  মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছিল।  যার ফলে  সমাজে শ্রেণী বৈষম্য এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। 


মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে আইয়ুব খান সাময়িক সফলতা পেলেও দীর্ঘমেয়াদী সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হন। মৌলিক গণতন্ত্রীদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অরাজকতার বিরুদ্ধে জনগণ বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে  এই ব্যবস্থার বিলিভ ঘটে। 


আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা


আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান

আরও পড়ুন-

ছয় দফা আন্দোলন: পটভুমি, ধারাসমূহ, গুরুত্ব ও তাৎপর্য




গ্রন্থপঞ্জি:

ড.আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯০৫-১৯৭১,  তৃতীয় সংস্করণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনী, ঢাকা ২০১৮,

ড. এ কে এম শওকত আলী খান ও অন্যান্য, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, গ্রন্থ কুটির পাবলিকেশন, ঢাকা, ২০১৪। 


No comments:

Post a Comment