Breaking

Wednesday 22 February 2023

হযরত মুয়াবিয়া (রা)- এর চরিত্র ও কৃতিত্ব


হযরত মুয়াবিয়া (রা)- এর চরিত্র ও কৃতিত্ব


মানুষ হিসেবে হযরত মুয়াবিয়া মহানবী (স) রাজ্যশাসন ও রাষ্ট্রনীতির যে দর্শন বাস্তবায়িত করে উত্তরসূরী খলিফাদের জন্য রেখে যান তার নাম খিলাফত। মহানবীর (স) তিরোধানের মাত্র তিন দশকের পর সেই খিলাফত ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা ধুলিস্যাৎ করে তার স্থলে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হযরত মুয়াবিয়া (রা) ইসলামের ইতিহাসে বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব। হযরত আলী (রা)-এর সাথে নীতিগত বিরোধ ও হত্যাকাণ্ড, হযরত ইমাম হাসান (রা)-কে খিলাফতের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করা, খিলাফতকে রাজতন্ত্রে রূপান্তর ও মদীনা থেকে দামেস্কে রাজধানী স্থানান্তর ইত্যাকার কার‌্যাবলীর কথা বাদ দিলে সাম্রাজ্যকে সুসংহত ও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে তিনি যে সাংগঠনিক ভূমিকা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অপরিসীম কর্মকুশলতা ও কর্মদক্ষতার দ্বারা একটি ইতিহাসের সমাপ্তি টেনে নতুন ইতিহাসের জন্মদাতা হিসেবে তার ব্যক্তিত্ব অনন্য সাধারণ। মানুষ ও শাসক হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব অসামান্য।






হযরত মুয়াবিয়া এর চরিত্র


  1. আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বঃ

হযরত মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের ধারক। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি গুণগ্রাহীদের হৃদয় জয় এবং জনসাধারণের উপর বিপুল প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। জনগণের বশ্যতা ও আনুগত্যের জন্য তিনি কূটনীতি ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ এবং অকাতরে অর্থও ব্যয় করেছেন। পিতার অবৈধ পুত্র যিয়াদকে আপন ভ্রাতা হিসেবে প্রকাশ্যে গ্রহণ করতেও তিনি এতটুকু দ্বিধা করেননি। 



আরও পড়ুন- 
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবন ও কর্ম: নবুয়ত লাভের পূর্ব পর্যন্ত 




  1. চরম উচ্চাভিলাষীঃ 

তিনি ছিলেন চরম উচ্চাভিলাষী। মুসলিম সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র শাসক হওয়ার উচ্চাভিলাষে তিনি সুচতুর পরিকল্পনায় এগিয়ে যান। তিনি হযরত আলীর (রা) সাথে বিরোধ বাঁধিয়ে রাখেন। সিফফীনের যুদ্ধে পরাজিত হয়েও কূটকৌশলে ‘দুমাতুল জান্দল'-এর মিমাংসার ছলনা করেন। হযরত আলী (রা) তাঁর দুরভিসন্ধির শিকার হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সাথে সাথে অবসান ঘটে খিলাফতের। মুয়াবিয়া (রা) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন আর মুসলিমরা চিরতরে হারায় তাঁদের নবীর (স) প্রদর্শিত খিলাফত ব্যবস্থা।


  1. দক্ষ ও কৌশলীঃ  

হযরত মুয়াবিয়া (রা) উচ্চাকাঙ্খার  বশবর্তী হয়ে অনেক কিছুই করেছেন। তাঁর দক্ষতা,কূটকৌশল, দূরদর্শিতা এবং অবিরাম সাধনা বলে একেবারে নিচৃস্তর থেকে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ক্ষমতাকে শক্ত হাতে রক্ষা করেন। বিপক্ষকে কাবু করার জন্য এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত।


  1. বংশের পক্ষে নিবেদিত প্রাণ:

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ উমাইয়া বংশের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। জনসাধারণের প্রতি তিনি যতটা নিবেদিত ছিলেন তার চেয়ে বেশি তিনি নিবেদিত ছিলেন স্বীয় বংশ ও  উত্তরাধিকারীদের স্বার্থের বিষয়ে। 


  1. কঠোরতা কোমলতার সংমিশ্রণ: 

হযরত মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন ধীর-স্থির মস্তিষ্ক এবং অত্যন্ত সাবধানী। বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তিনি কৌশলের সাথে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতেন, স্বার্থের খাতিরে যেখানে যেমন ব্যবহার তা প্রয়োগ করতেন। কখনো নম্র ব্যবহার দিয়ে, কোথাও অর্থ দিয়ে, কোথাও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করায় তিনি সফলতা লাভ করেছিলেন। এ শক্তি বলেই তিনি শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।




আরও পড়ুন-

বিদায় হজ্বের ভাষণ এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক ঘোষিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কারাবলী



  1. পরধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও উদারতাঃ 

হযরত মুয়াবিয়া (রা) মুসলিম-অমুসলিম সকল মানুষের প্রতি উদারতা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তিনি সকলকে সমান চোখে দেখতেন। তাঁর সুশাসনে প্রজারা সুখ-শান্তিতে বসবাস করতেন। গুণীদের কদর ও পৃষ্ঠপোষকতা ঃ ধর্ম-বর্ণ নির্র্বিশেষে তিনি গুণীজনদের কদর ও সম্মান করতেন। তিনি দক্ষতার কারণে বহু অমুসলিমকেও রাজকার্যে নিয়োগ করেছেন। একজন খ্রিস্টান তাঁর প্রধান উপদেষ্টাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। খ্রিস্টান চিকিৎসক ‘ইবনে আসল'-এর দ্বারা চিকিৎসা শাস্ত্রের কয়েকটি পুস্তক আরবিতে অনুবাদ করান। ‘আল আখতাল' নামক খ্রিস্টান কবি তাঁর সভাকবি ছিলেন।


  1. বাগ্মী ও জ্ঞানী:

হযরত মুয়াবিয়া (রা) সমকালীন আরবদের শ্রেষ্ঠ পাঁচজন বক্তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন।  তিনি অত্যন্ত মার্জিত রুচি, ধৈর্যশীল এবং সংযত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।  এসব গুণাবলীর কারণেই হযরত মুহাম্মদ (স.) এবং  ওমর (রা.) তাকে বেশ পছন্দ করতেন। 


  1. ব্যক্তিত্বঃ

মুয়াবিয়া (রা) উজ্জ্বল গৌরবর্ণ, দীর্ঘাকৃতি এবং স্থুলকায় ছিলেন। শাসক হিসেবে কূটকৌশলী হলেও ব্যক্তি মুয়াবিয়া ছিলেন অত্যন্ত সংস্কৃতিবান এবং ধর্মানুরাগী। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে তিনি ব্যক্তি হিসেবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। কেউ কেউ তাঁকে অঙ্গীকার ভঙ্গকারী, অসৎ ও দ্বীনী কাজে বাহ্যিক নিষ্ঠাবান বলে অভিহিত করেছেন। অনেকের মতে জাগতিক স্বার্থ হাসিলই ছিল তাঁর ধর্ম। তবে একজন সাহাবি সম্পর্কে এসব মন্তব্য সঠিক নয় । 




  1. ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে-

সৈয়দ আলী বলেন-

মুয়াবিয়া ছিলেন ধূর্ত, ধর্মভয় বিবর্জিত, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, কৃপণ অথচ প্রয়োজনবোধে অস্বাভাবিক উদার এবং যাবতীয় ধর্মীয় কাজে বাহ্যিকভাবে নিষ্ঠাবান। কিন্তু তাঁর কোন পরিকল্পনা বা আকাঙ্খার পরিপূর্ণতা সাধনে কোন মানবীয় বা ধর্মীয় রীতি-নীতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারত না। 


ঐতিহাসিক উইলিয়াম ম্যুর বলেন- 

উভয়ের মধ্যে হযরত আলী নিঃসন্দেহে শারীরিক দিক থেকে শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু যোগ্য ও সাহসী শাসক হিসেবে মুয়াবিয়ার কোন তুলনা ছিল না। মুয়াবিয়া সৈনিকের চেয়ে বেশি ছিলেন একজন রাজনৈতিক। 


ঐতিহাসিক অসবর্ন- 

হযরত মুয়াবিয়াকে হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি তারা হযরত মুয়াবিয়া কে  ধীরমস্তিষ্ক ও হিসাবি এবং তিনি বুদ্ধি সহকারে প্রজাদের উপর শাসন চালিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। 


কিন্তু হযরত মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে আনীত এসব ঐতিহাসিকদের নেতিবাচক মন্তব্যগুলো সর্বৈব সত্য নয়। 






আরও পড়ুন-
মুহাম্মদ (স.) এর নবুওয়াত লাভ এবং ঘটনাবহুল মক্কী জীবন




হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর কৃতিত্ব

  1. সুশাসক:

শাসক হিসেবে হযরত মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন অত্যন্ত উদার ও ন্যায়নিষ্ঠ। বিশৃ´খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বজ্রকঠোর, দরিদ্র ও দুর্বলের প্রতি ছিলেন অতিশয় দয়ালু এবং সুবিবেচক। তাঁর শাসনামলে শাসক ও শাসিত পাশাপাশি বসবাস কর। একজন সুশাসকের সব গুণাবলী তাঁর মধ্যে দেখা গিয়েছিল।


  1. শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ:

হযরত মুয়াবিয়া (রা) শাসক হিসেবে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিবিদ, বিচক্ষণ কূটনীতিবিদ, সুশাসক এবং সুচতুর সাম্রাজ্য সংগঠক হিসেবে অনন্য সাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। নিজকার্য সিদ্ধির জন্য যে কোন পন্থায় শত্রুদের বশে আনতে পারঙ্গম ছিলেন। তীক্ষèবুদ্ধি, ধৈর্য্য, শান্ত ও ধীরচেতা পদক্ষেপ, অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা, কূটকুশলতা রাজনৈতিক ভাবের দ্বারা তিনি সফল রাজনীতিবিদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।


  1. কূটনীতিবিদ:

তিনি ছিলেন একজন সার্থক কূটনীতিবিদ। রাষ্ট্র শাসনে এবং ক্ষমতা পাকাপোক্তকরণে তাঁর কূটনীতি যথেষ্ট ফলপ্রসু হয়েছিল। তাঁর কূটনীতির কাছে তদানীন্তন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও হেরে যেত এবং তাঁর করতলগত হত শিশু বালকের মত। 


  1. শান্তি-শৃ´খলা বিধায়ক: 

হযরত মুয়াবিয়া (রা) অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে রাষ্ট্র শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃ´খলা ও সংহতি আনয়নে সক্ষম হয়েছিলেন। পি, কে হিট্টির মতে, “বিশৃংখলার মধ্য হতে মুয়াবিয়া (রা) শৃংখলা আনয়ন করেন এবং একটি শান্তিপূর্ণ মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।''


  1. একটি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা:

হযরত মুয়াবিয়া (রা) মহানবী (স) প্রতিষ্ঠিত ও প্রদর্শিত ‘খিলাফত আলা মিন হাজিন নবুওয়ত'' ব্যবস্থাকে উৎখাত করে উমাইয়া রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর হাতেই একটি ইতিহাসের অপমৃত্যু হয় আর নতুন ইতিহাসে উমাইয়া যাত্রা শুরু করেন। ঐতিহাসিক আমীর আলির মতে “দামেশ্কে মুয়াবিয়া (রা) সিংহাসনারোহণ খিলাফতের সমাপ্তি, রাজতন্ত্রের প্রারম্ভ সূচনা করে।'


  1. দক্ষ প্রশাসক

মুয়াবিয়া (রা) খলিফায়ে রাশিদীনের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও ইসলামি জাতীয়তাবাদী নীতিগুলো সম্পূর্ণরূপে ধূলিস্মাৎ করে পারস্য ও বাইজানটাইন শাসন পদ্ধতির প্রভাবে প্রশাসনিক অবকাঠামো গঠন করেন। তিনি ‘মজলিশ-উশ-শুরা' বাতিল করেন এবং নির্বাচনের পরিবর্তে মনোনয়ন দ্বারা বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। 





আরও পড়ুন-
খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ।। ইসলামের পঞ্চম খলিফা 




  1. কেন্দ্রীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠাঃ 

কেন্দ্রীয় শাসন প্রবর্তনের জন্য তিনি রাজধানী দামেস্কে একটি সচিবালয় বা সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা করেন। এ সচিবালয়ে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ যোগদান করে মুয়াবিয়া (র)-কে নানা বিষয়ে অবগত করাতেন এবং তিনি তাঁদেরকে নির্দেশনা দিতেন। শাসনের কেন্দ্রীয়করণের দ্বারা সমগ্র রাজ্যের শান্তি-শৃ´খলা ও নিরাপত্তা বজায় ছিল। 


  1. ডাক ব্যবস্থা চালুঃ

ইসলামি রাষ্ট্রে সর্বপ্রথম তিনিই ডাক ব্যবস্থা চালু করেন। উট ও ঘোড়ার সাহায্যে তিনি সরকারী ও বেসরকারী চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রতি ১২ মাইল অন্তর একটি ডাকঘর স্থাপন করেন।


  1. রেজিস্ট্রি দফতর স্থাপনঃ

রেজিস্ট্রি দফতর প্রবর্তন মুয়াবিয়ার (রা) অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এ বিভাগের নাম ছিল ‘দীউয়ান-উল-খাতিম'। কেন্দ্র ও প্রদেশের সরকারী কার্যাদি, নির্দেশনাবলীতে খলিফার মোহর বা সীল দিয়ে সংরক্ষণ করা হত এবং মোহরাঙ্কিত করে অনুলিপি বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত। এতে জালিয়াতি বন্ধ হয়ে যায়। 


  1. রাজস্ব বিভাগের পুনর্গঠনঃ

প্রশাসনিক সংস্কারের অন্যতম পদক্ষেপ ছিল রাজস্ব বিভাগের পুনর্গঠন। প্রশাসন থেকে এ বিভাগকে আলাদা করে রাজস্ব ব্যবস্থাকে সুসংহত করেন। এ বিভাগের প্রধান ‘সাহিব-উল-খারাজ খলিফার নিকট হিসাব-নিকাশের জন্য দায়ী থাকতেন। এতে প্রাদেশিক গভর্নরদের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধি লাভ করে।


  1. আরবদের শ্রেষ্ঠ রাজা:

তিনি নিজেকে পারস্য ও রোমান রাজাদের মত আড়ম্বরপূর্ণ জাঁকজমক দ্বারা পরিবেষ্টিত রাখতেন। তিনি প্রাসাদে সশস্ত্র সৈনিক ও দেহরক্ষী রাখতেন। নিজের মতেই কাজ করতেন। মজলিসে শুরার কোন ধার ধারতেন না। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টির মতে- তিনি আরব বাদশাহদের মধ্যে কেবল প্রথমেই ছিলেন না, তিনি তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠও  ছিলেন।


  1. নৌ ও সেনা বাহিনী সংগঠনঃ

হযরত মুয়াবিয়া (রা) সর্বপ্রথম মুসলিম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন গোত্রভিত্তিক সৈন্যবাহিনীর পরিবর্তে সংঘবদ্ধ ও সুশৃংখল বাহিনী গঠন করে সাম্রাজ্যকে শাক্তিশালী করেন। তাছাড়া তিনি পুলিশ বিভাগ ও কৃষি বিভাগেরও উন্নয়ন সাধন করেন। 


খলিফা মুয়াবিয়া (রা) একজন প্রতিভাবান ও সুদক্ষ শাসক ছিলেন। তিনি প্রশাসনিক সংস্কার সাধন করে সমগ্র রাজ্যের মধ্যে সুশাসন প্রবর্তন করেন। তিনি প্রশাসনিক নীতি পরিবর্তন করেন এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষ শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সচিবালয়, ডাকবিভাগ, রাজস্ববিভাগ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। তার সময়ে শক্তিশালী নৌ-বাহিনী গঠন করেন।  হযরত মুয়াবিয়া (রা) মানুষ ও শাসক হিসেবে ছিলেন এক অনন্য সাধারণ অপ্রতিদ্বন্দী ব্যক্তিত্ব। তিনি নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসলামি শাসন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করেন। ইসলামি আদর্শ পরিপন্থী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে নিন্দিত হলেও তিনি আরবদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নৃপতির আসনে সমাসীন ছিলেন। পি.কে. হিট্টি যথার্থই বলেছেন- বস্তুত শাসক হিসেবে তিনি যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা তাকে মুসলিম জাহানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসকদের মর্যাদা দান করেছে। 




আরও পড়ুন- 


আরও পড়ুন-

মুহাম্মদ (স.) এর হিজরত: কারণ ও ফলাফল




গ্রন্থপঞ্জি:


  1. P.K, Hitti, History of the Arabs, third edition revised, Macmillan and Company Limited, London,1946, 

  2. Sayed Amir Ali, A Short History of the Saracens, Macmillan and Company Limited, London, 1916

  3. S.W, Muir, The Caliphate, its Rise, Decline & Fall, The Religious Tract Society, Piccadilly, London. 1891

  4. মো: আতিয়ার রহমান ও মো: ইব্রাহীম খলিল, মুসলমানদের ইতিহাস (570-750), 2014

  5. পি,কে হিট্টি, আরর জাতির ইতিহাস , (বাংলা অনুবাদ)

  6. সৈয়দ আমীর আলী, আরব জাতির ইতিহাস, (বাংলা অনুবাদ)

  7. প্রফেসর ড. মো আতিয়ার রহমান ও ড. মো. ইব্রাহীম খলিল,মুসলমানদের ইতিহাস (৫৭০-৭৫০)

  8. মোহা. আল মুস্তানছির বিল্যাহ, ইসলামের ইতিহাস: হযরত মুহাম্মদ (সা.), খোলাফায়ে রািশেদিন ও উমাইয়া খিলাফত









No comments:

Post a Comment